পৃষ্ঠাসমূহ

বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪

৫৭। ইউরোপে তিন বছর ৩ রমেশ চন্দ্র দত্ত

 

সেকালের বাঙালিদের ভ্রমণ                ধারাবাহিক 


                   -------  সুমনা দাম


                (আগের পর্বের পরে)

এই পর্বে সংশ্লিষ্ট দেশ - ফ্রান্স, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, ইটালি।


লেখক রমেশ চন্দ্র দত্ত তিন সপ্তাহের একটি ঝটিতি সফরে ফ্রান্স, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড ও ইতালির বিভিন্ন জায়গা দর্শন করলেন। ১৪ই আগস্ট ১৮৭১ খ্রিষ্টাব্দে লন্ডন ত্যাগ করে পরদিন ফ্রান্সের প্যারিস পৌঁছলেন তিনি ও তাঁর বন্ধুরা। প্যারিস বিশ্বের শ্রেষ্ঠ শহর কিন্তু তখন তা হতশ্রী হয়ে পড়েছে। বিশেষত কমিউনিস্ট অভ্যুত্থানে অনেক স্থাপত্য নষ্ট হয়েছে। প্যালেই রয়াল, ভঁডোম স্তম্ভ, টুইলারি (ফ্রান্সের রাজপ্রাসাদ) ধ্বংস করা হয়েছে। যদিও সুন্দর আলোকোজ্জ্বল পথ দেখে মনে হবে প্যারিস সবসময় আনন্দ উৎসবের মধ্যে আছে। কী ঝড় এই শহরের উপর দিয়ে বয়ে গেছে তা একমাত্র ধ্বংসস্তূপগুলি দেখলে বোঝা যায়। (ফ্রান্স-প্রুশিয়া যুদ্ধের কারণে ও প্যারিস গণঅভ্যুত্থানের জন্য ১৮৭১ এ প্যারিসে রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল)। প্যারিসে লুভর মিউজিয়াম একটি রাজকীয় প্রাসাদ যা টুইলারির সংলগ্ন। কিন্তু ভাগ্যবশত লুভর এই ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। লেখক লুভরে স্ট্যাচু ও ছবির অমূল্য সংগ্রহ দেখলেন। প্রথম নেপোলিয়নের আর্ক দ্য ট্রিঅঁফ অক্ষত আছে। সেখানে সুন্দর শিল্পকলার সঙ্গে নেপোলিয়নের জয়লাভের বর্ণনা লেখা আছে। তাঁরা স্তম্ভের উপর উঠে প্যারিস ও স্যেন নদীর শোভা দেখলেন। স্যেন নদীতে স্টিমারে চড়ে তাঁরা অনন্য সুন্দর নোত্র ডাম চার্চ দেখতে গেলেন। নেপোলিয়নের মরদেহ সেন্ট হেলেনা দ্বীপ থেকে এনে এখানে সমাধি দেওয়া হয়েছে। সমাধির কাছে লেখা আছে নেপোলিয়নের শেষ ইচ্ছা যে মৃত্যুর পর তাঁর অবশেষ যেন স্যেন নদীর ধারে তাঁর প্রিয় ফরাসি জনগণের মধ্যে সমাহিত করা হয়। সমাধি চার-পাশ ঘিরে শ্বেত পাথরের স্তম্ভ, মূর্তি রয়েছে ও সমাধির উপর একটি সুন্দর ডোম আছে। 

প্যারিস থেকে তাঁরা সেন্ট ক্লাউড নামে ফ্রান্সের রাজাদের প্রিয় অবসরস্থলে গেলেন। এখানকার প্রাসাদ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু সুন্দর উদ্যান ও রাস্তাঘাট রয়েছে। এবার তাঁরা গেলেন ভার্সেই, যা ফ্রান্সের সব থেকে শক্তিশালী রাজা চতুর্দশ লুইয়ের কীর্তি। যদিও এখন সেখানে বিভিন্ন অফিস বসেছে তবু তাঁরা দেখার অনুমতি পেলেন। তাঁরা বিভিন্ন কক্ষ ঘুরে দেখলেন। সেখানকার বিভিন্ন ছবি ও মূর্তিগুলি ফ্রান্সের উজ্জ্বল দিনের গৌরব প্রকাশ করছে। ভার্সেইয়ের উদ্যান, ছায়াচ্ছন্ন পথ, ফোয়ারা, নিকুঞ্জ, বসার আসন প্রভৃতি কেন রূপকথার জগতের মত সুন্দর। 

এরপর প্যারিস হয়ে তাঁরা রাইন নদীর ধারে অবস্থিত জার্মানির কোলন শহরের দিকে যাত্রা করলেন। অডি কোলনের জন্য বিখ্যাত শহর কোলন কিন্তু অত্যন্ত নোংরা। পরদিন স্টিমারে তাঁরা মায়েন্স শহরে চললেন। রাইন নদীর দু'পাশে পাহাড় আর অনেক দুর্গ দেখা যায়। বন (Bohn) পেরোনোর পর তাঁরা সেভেন হিলস ও তার উপর ড্রাচেনফেলস দুর্গ দেখলেন। রাইন নদীর দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে কিছু দু'পাশে শুধু পাহাড় আর পাহাড়। সুউচ্চ শৃঙ্গ কুয়াশা ভেদ করে ওপরে উঠে আছে। 

এবার এল সুইজারল্যান্ড। ফ্লুলেন ও  লুসার্ন লেক দেখলেন, যা পৃথিবীর সুন্দরতম স্থান। শান্ত সরোবর সুউচ্চ পর্বত বেষ্টিত হয়ে এক অপূর্ব দৃশ্যপট রচনা করেছে। লুসার্ন থেকে স্টিমার ও ঘোড়ার গাড়িতে ইন্টারলাকেন গেলেন, যেটি ব্রেঞ্জ ও থুন হ্রদের মধ্যে অবস্থিত। ইন্টারলাকেনে তাঁরা সাদা তুষারাবৃত জুং ফ্রাউ (আল্পসের একটি সুউচ্চ শৃঙ্গ) দেখলেন চাঁদের আলোয়। এরপর স্টিমারে হ্রদ পার হয়ে তাঁরা ট্রেনে বার্ন গেলেন। বার্নে সুন্দর সুন্দর গির্জা, বাড়ি, রাস্তাঘাট আছে। বার্ন থেকে বরফে ঢাকা আল্পসের দৃশ্য অসাধারণ। এবার তাঁরা জেনেভা লেকের ওপর অবস্থিত লুসার্ন গেলেন। এখানে ঐতিহাসিক গীবন তাঁর 'হিস্ট্রি অফ রোম' লেখা শেষ করেন। সেখান থেকে এলেন শিলন ক্যাসেলে। গভীর জলে ঘেরা মূল ভূখণ্ড থেকে একটি মাত্র ব্রিজ দিয়ে যুক্ত এই দুর্গের অন্ধকার মাটির নীচের ঘরে গ্যালান্ট বনিভার্ড (সুইস স্বাধীনতা সংগ্রামী) ছয় বছরের জন্য শিকল দিয়ে স্তম্ভে বাঁধা ছিলেন। সেই ঘর, স্তম্ভ, শিকল লেখক দেখলেন। আর দেখলেন ঘরের একটি স্তম্ভে কবি বায়রণ তাঁর নাম খোদাই করে রেখে গেছেন। শিলন থেকে তাঁরা লেকের অন্য পাড়ে জেনেভা শহরে গেলেন। স্টিমারে চলতে চলতে লেকের একধারে জুরা পর্বতমালা ও অন্য পারে সুউচ্চ আল্পস পর্বত মালা দেখতে পেলেন। জেনেভা রুশো (দার্শনিক) ও সিসমন্ডির (ঐতিহাসিক) জন্মস্থান। এখান থেকে তুষারাবৃত মণ্ট ব্ল্যাঙ্ক (৪৮০৮ মিটার) দেখা যায়। 


সুইজারল্যান্ড ভ্রমণকালে লেখক লক্ষ্য করলেন যে অত্যন্ত দরিদ্ররাও এখানে ভালো আছে। তাদের ছোট কাঠের কুটির তারা সুন্দরভাবে রং করে সাজিয়েছে। ঘরের লাগোয়া জমি তারা চাষ করেছে। সবকিছু খুব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। তাদের ব্যবহার খুব ভদ্র এবং তারা ইউরোপের বিশেষ করে ইংল্যান্ডের দরিদ্র কৃষকদের থেকে খুব স্বতন্ত্র। 

সেখান থেকে লুসার্ন ফিরে তাঁরা ডিজিলেন্স নামে ঘোড়ার ডাকগাড়ি করে সেন্ট গথার্ড নামক ইউরোপের অত্যন্ত সুন্দর একটি গিরিপথ হয়ে ইতালি গেলেন। এই গিরিপথ টি সমুদ্রতল থেকে ৭০০০ ফুট উঁচু। এবার এলো ইতালির কোমো। সেন্ট গথার্ড অতিক্রম করার সারা দিনের ক্লান্তি কোমো লেকে স্নান করে দূর হল। কোমো থেকে তাঁরা গেলেন মিলানে। মিলানে শ্বেত পাথরে তৈরি ক্যাথিড্রোলের গঠনশৈলী ইউরোপের অন্য সব স্থানের তুলনায় শ্রেষ্ঠ। মিলানের পর ভেনিস। 

ভেনিস এক আশ্চর্য শহর। যেখানে এবিং সমুদ্রের জল শহরের রাস্তায় বয়ে চলেছে। তার মধ্যেই রয়েছে অপূর্ব সুন্দর গির্জা, ক্যাথিড্রাল, প্রাচীন প্রাসাদ, গম্বুজ প্রভৃতি। সেন্ট মার্কস প্লেস শহরের কেন্দ্রস্থল। এছাড়া ডগেস প্যালেস, প্রিন্সলি প্যালেস দেখলেন। আর দেখলেন প্রাসাদের অন্ধকারময়, অস্বাস্থ্যকর নির্মম কারাগার। সেন্ট মার্কস চার্চে ভেনিসিয়দের পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান জয় করে নিয়ে আসা (মিশর, কনস্টান্টিনোপল, জেরুজালেম প্রভৃতি স্থান থেকে নিয়ে আসা) মূর্তি, স্থাপত্য দেখলেন। তাছাড়া ভেনিসের প্রসিদ্ধ স্বর্ণ সিংহ (শহরের প্রতীক) রয়েছে এখানে। আরো কিছু চার্চ এখানে রয়েছে যেগুলি ইতালিয় শিল্পকলার অপূর্ব নিদর্শন। তারপর তাঁরা  ভেনিস থেকে স্টিমারে ব্রিন্দিসি হয়ে বোম্বের (ভারত) উদ্দেশ্যে পাড়ি দিলেন, প্রায় তিন সপ্তাহ পথে। 


এর আঠেরো বছর পরে ১৫ ই এপ্রিল ১৮৮৬ লেখক কলকাতা থেকে আবার একই পথে ইংল্যান্ড যাত্রা করেন। এবার তাঁর সঙ্গী তাঁর স্ত্রী, এক ভাই ও চার ছোট ছোট ছেলে মেয়ে। জলপথে একই স্থানের বর্ণনার পুনরাবৃত্তি না করে শুধু মাত্র যেসব নতুন সংযোজন লেখক এবারের বর্ণনায় করেছেন সেটুকুই এখানে রাখা হল। ভারত মহাসাগরে লেখক এবার অনেক তিমি দেখলেন, যদিও সেগুলি তেমন বড় নয়। লন্ডন শহরে তাঁরা কেনসিংটন গার্ডেন, কেনসিংটন প্যালেস দেখলেন। এই প্রাসাদে থাকাকালীন রানী ভিক্টোরিয়া প্রথম তাঁর রানী হওয়ার সংবাদ পান। এর কাছেই আলবার্ট মেমোরিয়াল ও অ্যালবার্ট হল অবস্থিত। হাইড পার্ক, গ্রীন পার্ক হয়ে সেন্ট জেমস পার্কে পৌঁছলেই আসে মহারানীর প্রাসাদ বাকিংহাম প্যালেস। ওয়েস্ট মিনিস্টার অ্যাবের কাছে রয়েছে পার্লামেন্ট হাউস। লন্ডনের উত্তর দিকে রিজেন্ট পার্কে আছে লন্ডনের চিড়িয়াখানা। 

এবার লেখক শিক্ষা জগতের পীঠস্থান অক্সফোর্ড দর্শন করলেন। পরিবারকে ইংল্যান্ডের সমুদ্র উপকূল দেখানোর জন্য তিনি লিটল হ্যাম্পস্টনে নিয়ে গেলেন কারন এটি শান্ত নির্জন স্থান এবং এ অরুনডেলের কাছে অবস্থিত। সেখান থেকে তাঁরা ব্রাইটনের একুরিয়াম দেখলেন, যেখানে অক্টোপাস সহ অনেক অদ্ভুত সামুদ্রিক প্রাণী আছে। সমুদ্রতীরের বালিতে হাঁটতে আর সমুদ্রের ঠান্ডা জলে স্নান করতে লেখক ও তাঁর পরিবারের খুবই ভালো লাগত। আশেপাশের গ্রাম্যপথে হেঁটে বেড়ানো একটা আনন্দের কাজ ছিল। বাচ্চারা ঝোপঝাড় থেকে ব্ল্যাকবেরি সংগ্রহ করতে খুব মজা পেত। 

এরপর লেখক ব্রিস্টলে গেছিলেন বক্তৃতা দেওয়ার জন্য আমন্ত্রিত হয়ে। ব্রিস্টলের সেন্ট মেরি র‍্যাডক্লিফ চার্চের প্রাঙ্গণে একটি সৌধ রয়েছে বালক কবি চ্যাটারটানের নামে, যিনি বলতেন তাঁর লেখা কবিতাগুলি আসলে তিনি ওই গির্জায় পেয়েছিলেন। ব্রিস্টলের সব থেকে সুন্দর অংশ ক্লিফটন। এখানে অ্যাভন নদীর ওপর ঝুলন্ত সেতু রয়েছে। বাথ ইংল্যান্ডের একটি সুন্দরতম শহর, যার চারপাশ সবুজ পাহাড় ঘেরা। অতি প্রাচীনকাল থেকে এটি স্বাস্থ্য নিবাস ছিল। প্রাচীন রোমান যুগের স্নানাগার এখানে আবিষ্কৃত হয়েছে। এখানকার অ্যাবে চার্চকে সুন্দর অজস্র জালনার জন্য 'পশ্চিম ইউরোপের লণ্ঠন' বলা হয়। ওয়েলস্ একটি ছোট শহর কিন্তু এটি কাথিড্রালের জন্য বিখ্যাত। এখানে প্রাচীন বিশপের দুর্গ দেখলেন তিনি। তারপর প্রাচীন গ্লাসনবেরি অ্যাবে দেখলেন। এরপর ওয়ে নদী, যা ইংল্যান্ডের রাইন নামে খ্যাত, দেখে তিনি লিটল হ্যাম্পস্টনে পরিবারের কাছে ফিরে গেলেন। 

লিটল হ্যাম্পস্টন থেকে লেখক ২৫ শে এপ্রিল ১৮৮৬ ফ্রান্সের প্যারিসে পৌঁছান। আগে প্যারিসের অনেক দ্রষ্টব্য লেখকের চোখ দিয়ে দেখা হয়েছে। এবার বাকি স্থানগুলির পালা। 

স্যেন নদীর উত্তর ও দক্ষিণে বর্তমান প্যারিস ছড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু আগে নদীর উত্তর, দক্ষিণের এই অংশ দুটিকে প্যারিস বলা হত না। স্যেন নদীর বুকে দুটি দ্বীপ-ই প্যারিস ছিল। এখন এই অংশকে সিটি বা পুরনো প্যারিস বলা হয়।  সিটিতে নোত্র-ডাম (ক্যাথিড্রাল), প্যালেই দ্য জুস্টিস (বিচারালয়), লা সাঁত চ্যাপেল দেখে তিনি স্যেনের উত্তর পাড়ে গেলেন। সেখানে লুভর আর্ট মিউজিয়াম, টুইলারি, প্যালেই দি লা কনকর্ড (ইউরোপের সব থেকে বড় ও সুন্দর স্কোয়ার বা প্রাঙ্গণ), শঁপস এলিজে (দুদিকে উদ্যানে সাজানো রাস্তা) আর আর্ক দ্য ট্রিঅঁফ (নেপোলিয়নের বিজয় সূচক সৌধ), বোয় দ্য বুলগন (এটি রাজাদের শিকারের জঙ্গল ছিল, এখন বিশাল বড় পার্ক ও চিড়িয়াখানা), ভঁডোম স্তম্ভ (নেপোলিয়নের জয়সূচক স্তম্ভ), জোয়ান অফ আর্কের মূর্তি (ফ্রান্সের সাহসী যোদ্ধা যিনি ১৪৩১ এ শহীদ হন), পালই রয়াল (ঐতিহাসিক প্রাসাদ), সেন্ট-উস্তাচ চার্চ, ওটেলদ্য ভিল (১৮৭১ এর বিদ্রোহীরা এটি পুড়িয়ে দেয়, এটি প্যারিসের একটি সুন্দর টাউন হল), সেন্ট্রাল মার্কেট, বাস্তিল দুর্গ দেখলেন। পালই দিলা কনকর্ড থেকে বাস্তিল রু দ্য রিভোলি নামক রাস্তা ধরে সোজা এসে দেখলেন। 

এরপর থেকে বুলেভার্ড নামক প্যারিসের বিখ্যাত ও আকর্ষণীয়, দুপাশে গাছের ছায়াযুক্ত দোকান, ক্যাফে, চওড়া ফুটপাত দেওয়ার পথ ধরে চলতে শুরু করা হল। এখানকার দ্রষ্টব্য স্থান মেডেলীন চার্চ, অপেরা হাউস (সংস্কৃতির পিঠস্থান প্যারিসে অপেরা গানের হল), বুরস (প্যারিসের স্টক এক্সচেঞ্জ), ব্যাঙ্ক অফ ফ্রান্স (১৮০৩ এ প্রতিষ্ঠিত), চতুর্দশ লুই-এর বিজয় সূচক আর্চ, মন্টমার্ত্র (প্যারিসের উত্তরতম ও উচ্চতম স্থান), শোমঁ (প্যারিসের উত্তর-পূর্ব অংশের একটি ছোট টিলা, যার পাদদেশে সুন্দর লেক উদ্যান রয়েছে)- এই সব দেখলেন। এই পাহাড়ের নীচে প্রাচীন সমাধিক্ষেত্র পের লাশেজ রয়েছে (অনেক বিখ্যাত ফরাসি মানুষের সমাধিস্থল এটি)। 

স্যেন নদীর দক্ষিণ পাড়ের দ্রষ্টব্য স্থানগুলি পশ্চিম প্রান্ত থেকে শুরু করে শঁপ দ্য মার্স  (এটি একটি বড় পার্ক যেটি আগে সামরিক প্যারেডে ব্যবহৃত হতো), নেপোলিয়নের সমাধি, পার্লামেন্ট হাউস, পন্থেওঁ (২৭২ ফুট উঁচু ডোম বিশিষ্ট ঐতিহাসিক ভবন, এখানে ফ্রান্সের বিখ্যাত কবি ভিক্টর হুগো প্রমুখকে সমাহিত করা হয়েছে), জারদাঁ দে প্লাঁত (ঐতিহাসিক উদ্যান যেখানে বিভিন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদের মিউজিয়াম আছে), ক্যাটাকম্ব (প্যারিসের বিশাল ভূগর্ভস্থ সমাধিস্থল যেখানে অষ্টাদশ শতাব্দীতে শহরের অতিরিক্ত অবস্থান থেকে মৃতদেহ স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। পরিত্যক্ত খনিগুলি কবর হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। আগে এগুলি জনসাধারণ দেখতে পারত, ২০০৯ থেকে তা বন্ধ করা হয়েছে), ভূগর্ভস্থ প্রণালী (তৃতীয় নেপোলিয়ানের তৈরি এই প্রণালীগুলি মানুষ দেখতে পারে পায়ে হেঁটে বা নৌকা করে)। এই সমস্ত দেখে লেখক আবার ইংল্যান্ডের লিটল হ্যাম্পস্টনে ফিরে যান।

                        (চলছে)

২টি মন্তব্য:

  1. এই পর্বে লেখকের ফ্রান্স, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড ,ইটালি র ভ্রমণ বৃত্তান্তের মাধ্যমে অনেক অজানাকে জানলাম। সুন্দর একটি পর্ব। লেখিকার উপস্থাপনাকে সাধুবাদ জানাই।
    শিউলি

    উত্তরমুছুন