পৃষ্ঠাসমূহ

সোমবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৪

৩২। তীর্থ ভ্রমণ ১৭ যদুনাথ সর্ব্বাধিকারী

       

সেকালের বাঙালিদের ভ্রমণ                ধারাবাহিক 


                   -------  সুমনা দাম


                     (আগের পর্বের পরে)


দেড় মাস দিল্লি থাকার পর লেখক প্রয়াগের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। পথে বদরপুর গ্রাম পড়ল। সেখানে বুলকট্রেনের বয়েল বদল করা হয়। মানে সেখানে গরুর গাড়ির গরু পাল্টানো হয়। পঞ্চম দিনে বৃন্দাবনে পৌঁছানো হলো। সেখানে দেব দর্শন, পূজা ও বন্ধুদের কাছে শেষবারের মতো বিদায় নিয়ে আবার পথ চলা শুরু। সেকেন্দরাবাগ অর্থাৎ সুলতান সিকান্দার শাহ লোদীর প্রতিষ্ঠিত সিকান্দ্রাবাদ হয়ে তিনদিনে সবাই আগরায় (আগ্রা) পৌঁছালেন। 

উত্তর দক্ষিণে আগ্রা শহর দুই ক্রোশ দীর্ঘ ও পূর্ব পশ্চিমে এক ক্রোশ প্রস্থ। এখানে খুব ভালো বাজার আছে। হালওয়াই-এর পট্টি, ভুনাওয়ালাদের পট্টি, গান্ধির দোকান (ফুলেল আতর, গোলাপ জল প্রভৃতি বিক্রির), জরির আর তিল্লার কাজের দোকান, গুড়গুড়ি-আলবোলার দোকান, ভালো গালিচা, সতরঞ্চির দোকান প্রভৃতি অনেক আছে। আগ্রা শহরে প্রায় ৫০০ বাঙালি আছে। অনেক সাহেবও আছে। এখানে নানা রকম কাছারি, ট্রেজারি, ব্যাংক, আদালত আছে। 


আগ্রা অতি প্রাচীন শহর। যখন হিন্দুদের রাজ্য ছিল তখন এর নাম ছিল অগ্রবন। মুসলমান রাজ্য হওয়াতে আকবর বাদশাহ এখানে কেল্লা তৈরি করে নাম দেন আকবরাবাদ। পরে মহারাষ্ট্রীয়গন দখল করাতে নাম হয়ে যায় আগ্রা। 


আগ্রার কেল্লা যমুনার উপরে অবস্থিত। প্রস্তর নির্মিত মজবুত উঁচু প্রাচীর যুক্ত এই কেল্লার মধ্যে মতি মসজিদ আছে। তার মধ্যে আছে শ্বেত পাথরের তৈরি প্রশস্ত ঘর যেখানে ১৫০০ মানুষ এক সঙ্গে বসে উপাসনা করতে পারে। যেখানে বাদশাহদের কাছারি হতো সেটি দেওয়ান দেওয়ান-ই-আম-খাস। বসার তখ্ত আছে নানা বর্ণের প্রস্তরে খচিত। সিংহাসনের সামনে সোমনাথ মন্দিরের চন্দনের গেট। দেওয়ান-ই-আমের হাওয়াখানায় বাদশাহের কষ্টিপাথরের আরবি লিপি খোদিত তখতের সামনে উজিরের শ্বেত পাথরের তখত। এর দক্ষিণে শিশমহল যেখানে বেগমেরা থাকতেন। শ্বেতপাথরে তৈরি সুবর্ণ খচিত নানা বর্ণের প্রস্তরে চিত্র বিচিত্র। এখানে অতি সৌখিন স্নানাগার আছে। নানা জাতীয় পুষ্পের উদ্যান আছে আছে। আছে  সোনার ছাতা লাগানো  সম্বল বুরুজ (সামান বুর্জ?)। 


আগ্রার কেল্লা থেকে দেড় ক্রোশ দক্ষিণে যমুনার উপরে তাজবিবির রোজা যাতে শাজাহান বাদশাহের ও তাজবিবির কবর আছে। লেখক তাজমহলের কথা বলছেন। মহলটি পুরো মর্মর বা মার্বেল বা শ্বেতপাথরে তৈরি। তার উপর দামী দামী পাথরের ঝাড়, ফুল, ফল, পাতা যার যেমন রং সেই রংয়ের পাথর বসিয়ে খুব ভালো করে পালিশ করে তৈরি। সোনার কাজ অনেক আছে। ভবনটি চার তলা। নীচে দুটি কবর আছে, তার উপর তলায় ওই দুটি কবরের আকৃতি আছে। যে ব্যক্তি এই ভাস্কর্য শিল্প করেছেন তিনি সামান্য মানুষ নন, বিশ্বকর্মার ন্যায় তাঁর বিদ্যাবুদ্ধি। পালিশ এমন সুন্দর যে সাপ উঠতে পারেনা, মশা মাছি বসলে পড়ে যায়। চার তলার ওপর হাওয়াখানা বুরুজ আছে, সেটি থেকে বহু দূরে দেখা যায়। এছাড়া অনেক ঝাঝরি, স্তম্ভ ইত্যাদি আছে। সামনে যে পুষ্পের উদ্যান আছে তার শোভা অপূর্ব। সেই সুগন্ধযুক্ত উদ্যানের চারপাশে পাথরের বাঁধানো পথ। তার দুই ধারে জলের খাল চারপাশকে সুশীতল রাখে। শ্বেতপাথরের বসার সুন্দর জায়গা আছে। বাগানে অসংখ্য রকমের ফুল ও ফলের গাছ আছে। এমন কি সবজির গাছ, পাহাড়ি ফুলের গাছ, মেওয়ার গাছও আছে। 


পরবর্তী দর্শনীয় স্থান বর্তমান উত্তরপ্রদেশের বটেশ্বর। এবার তাঁরা পদব্রজে না গিয়ে যমুনায় বজরা করে চললেন। নাগরিয়া, চীনবাস হয়ে এলো বটেশ্বর। এই পথে ডাকাতের উপদ্রব খুব বেশি। বটেশ্বর শিব, চতুর্ভুজ নারায়ণ, গৌরীশংকর মন্দির দর্শন ও পূজা করে, তাঁরা শহর দেখলেন। এটি ভাদরিয়া রাজার রাজ্য (চম্বল নদী উপত্যকার রাজত্ব করা রাজপুত রাজবংশ ভাদরিয়া)। যমুনার ধারে শহর। আগের রাজা ও ধনীরা, যমুনার ঘাট বাঁধিয়ে তার উপর শিব মন্দির স্থাপন করেছিলেন। কিন্তু দেখে মনে হল পূজা তেমন হয় না এখন। চল্লিশ হাজার ঘর, সব জাতির বাস। ধনী ব্যক্তি অনেক আছে । এখানে ২০০ টি শিব মন্দির আছে। শহরে গোঁসাই, সন্ন্যাসী, মোহান্তদের আখড়া আছে। এখানে কার্তিক মাসের পূর্ণিমাতে মেলা হয়। অনেক দেশ থেকে মানুষ এখানে আসে। হাতি, ঘোড়া, উট, গরু, গাধা প্রভৃতি পশু হাজার হাজার বিক্রি হয়। এই মেলা দুই মাস ব্যাপী চলে। জয়পুর, কড়রি, বিকানীর, হাতরাস, ভরতপুর , গোয়ালিয়রের রাজারা এই মেলায় আসেন। 


পরদিন জলপথে ভাদোরিয়ার রাজার এলাকা পান্নায় (?) এলেন। এখানে রাজার বাড়ি, কেল্লা আছে। রাজবাড়ীতে লক্ষীনারায়ণ মূর্তি দর্শন করা হলো। সেদিন রাতে যমুনার ঘাটের কাছে থাকার সময় তাঁরা আশ্চর্য এক দৃশ্য দেখলেন। জলের মধ্যে কখনো মানুষের আকৃতি, কখনো গাছের মতো হয়ে, জলের মধ্যে দাঁড়িয়ে উঠে, আবার জল মন্থন করে, জল কল্লোলের মতো শব্দ করে, জল দুই তিন হাত উপরে ওঠে, আবার ডিঙ্গির মতো ভেসে কিছুদূর চলে যায়। তারপর ধোপা যেমন কাপড় কাছে সেরকম শব্দ ও জলোচ্ছ্বাস হতে থাকলো। এরকম অনেক রাত পর্যন্ত চলল। সকালে পরীক্ষা করে কিন্তু যমুনার জলে কিছু দেখতে পাওয়া গেল না (মনে হয় শুশুক বা সেরকম কোনো জলচর প্রাণীরা ঝাঁক বেঁধে এসেছিল)। 


এরপর জলপথে ঘাটকো নামক স্থানে ভাদোরিয়া রাজার ভবনে বিহারিজি দর্শন করে ইটওয়া (এটয়া) তে পৌঁছলেন। এটয়া বড় শহর। অনেক বাঙালি বাবু থাকেন। ম্যাজিস্ট্রেট, কালেক্টরের কাছারি, ডাকঘর, ছাউনি সব আছে। এরপর জলপথে আদোনি (আন্দায়া), ভরে (ভরেহ্) হয়ে যমুনা ও চম্বল নদীর সঙ্গমস্থলে পৌঁছলেন তাঁরা। এরপর জলপথে যেতে যেতে উল্লেখ্য স্থান এল অরুয়া, কালপী (কালপি)। কালপিতে শহর দেখা ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনা হল। এখানে কেল্লা, শিব ও নারায়ণের মন্দির, বাঙালি বাবুদের স্থাপিত কালীবাড়ি, সাহেবদের বাংলা ও গোরস্থান দেখা হল। জলপথে পরবর্তী স্থান যেখানে তাঁরা শহর দেখলেন, হল হামিরপুর (হামিরপুর)। এখানে কালেক্টর, ম্যাজিস্ট্রেট-এর কাছারি ডাকঘর, শিবমন্দির আছে। তারপর কোরনি (?), প্রদনগ্রাম (?) হয়ে প্রয়াগ যাত্রা। 


যমুনার এই জলপথে ডাকাতের খুব ভয় আছে। বজরার ছাদ থেকে এক ক্রোশ পর্যন্ত দেখা যায়। সেখানে চারজন সিপাহী বন্দুক, তলোয়ার নিয়ে পাহারা দেয়। বারো জন মাঝির যমদূতের মতো স্বাস্থ্য। একটি পাহাড়ি কুকুর আছে, তার সিংহের মতো তেজ। তবু একবার ডাকাতির চেষ্টা হয় লেখকদের বজরায়। লেখক ভাবেন যে কোম্পানি বাহাদুরের রাজ্যে এখনো এত সাহসী দস্যু আছে। 


যমুনার স্থানে স্থানে সারস, মানিকজোড়, শামুকখোল, বালিহাঁস, খড়হাঁস, চক্রবাক, বক, চিল, গাংচিল, পানকৌড়ি, সরাল ইত্যাদি নানা জাতীয় শত সহস্র পাখি জলে বিচরণ করে। মকর (অধুনা বিলুপ্তপ্রায় ডুগং বা মেলেটি কি ?), হরেল (ঘড়িয়াল,),  কুমির, কচ্ছপ প্রভৃতি জলজন্তুকে চড়ায় শুয়ে থাকতে দেখা যায়। গঙ্গায় যত শুশুক, হাঙ্গর আছে যমুনাতে তত জল জন্তু নেই। 


চলার পথে একে একে তাঁরা পার হলেন চিল্লাতারা (চিল্লা ও তারা), লভেটা (?), ডাকাতির জন্য বিখ্যাত চরখা মারখা গ্রাম, কৃষ্ণগড় (?), রাজাপুর (রাজাপুর), প্রতাপপুর (?) এসব হয়ে বজরা এল এলাহাবাদের ঘাটে। শেষের দিকে যমুনার জলের তলায় অনেক ডুবো পাহাড় বা পাথর ছিল। খুব সাবধানে বজরা চালাতে হলো। 


দ্বিতীয়বার এলাহাবাদ এসে লেখক আরো বিস্তৃত ভাবে এলাহাবাদের বর্ণনা দিয়েছেন। শহরটি পাঁচ ক্রোশ বিস্তৃত। এখানে পাঁচটি প্রধান বাজার আছে - দারাগঞ্জ, কিটগঞ্জ (কিট সাহেবের বাজার), মুঠিগঞ্জ, কটরা বাজার, বড়বাজার চক। প্রয়াগী পান্ডার বসতি প্রায় ষোলোশ। তারা সবাই ধনবান। রাজারাজড়ারা এই স্থানে এসে এক লক্ষ মুদ্রা পর্যন্ত দান করেন। যুক্তবেনী অর্থাৎ গঙ্গা-যমুনা ও অন্তঃসলিলা সরস্বতীর সঙ্গমস্থল প্রয়াগ। দেবতা আছেন বেণীমাধব, ভরদ্বাজ ও সোমেশ্বর। আকবর বাদশাহের সময় প্রয়াগের নাম এলাহাবাদ হয়েছে (উল্লেখ্য যে ২০১৮ থেকে আবার এলাহাবাদের নাম হয়েছে প্রয়াগরাজ)। বাদশাহ আকবর কাম্যকূপের উপরে যমুনার তীরে ত্রিবেণী সঙ্গমে কেল্লা স্থাপন করেছেন। অক্ষয়বট কেল্লার ভিতরে রয়েছে। এলাহাবাদ কেল্লার মতো সুগঠিত কেল্লা প্রায় দেখা যায় না। এর মধ্যে বাদশাহের শিশমহল, আয়নামহল, লালমহল, দেওয়ান খাস ও সমস্ত কাছারি ছিল। লেখকের দর্শনকালে কোম্পানি অন্যান্য দেশে রাজ্য জয় করে পরাজিত রাজাদের এখানে এনে বন্দী করে রাখতো। কোম্পানির ম্যাগাজিন, তোপখানা, শেলেখানা হয়েছে কেল্লায়। এই শহরে জজ, ম্যাজিস্ট্রেট, কালেক্টর, মুন্সেফ, আবগারি প্রভৃতির কাছারি, সেনা ছাউনি, হাসপাতাল আছে। অনেক বাঙালি এখানে বাস করে। রাস্তাঘাট খুব ভালো। রাস্তার দুই পাশে শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে সাজানো সুন্দর সুন্দর দোকান ও পাকা বাড়ি। শহরে কম বেশি এক লক্ষ হিন্দু ও মুসলিমের বাস। 


প্রয়াগের কাম্যকূপে যে যা কামনা করে প্রাণ ত্যাগ করবে তার সেই মনোবাসনা সিদ্ধ হবে ও সেই ব্যক্তি জাতিস্মর হবে বলে প্রবাদ ছিল। এরপর লেখক এক অদ্ভুত গল্প বলেছেন। মুকুন্দ ব্রহ্মচারী নামক এক সাধক সোমেশ্বর শিবের তপস্যায় দেবাদেশ পান যে তাঁকে পুণর্জন্ম নিয়ে ঐশ্বর্য ভোগ করতে হবে এবং তাঁর শিষ্য বীরভদ্রেরও একই পরিণাম হবে। শিষ্য গুরুকে না ছেঁকে দুগ্ধ দিতেন পানের জন্য। যোগবলে তা জানতে পারেন গুরু। সেই কাজ যবন তুল্য ছিল। তাই তিনি বুঝতে পারেন পুণর্জন্মকালে তাঁকে যবন রূপে অর্থাৎ বিধর্মী হিসাবে জন্ম নিতে হবে। গুরুশিষ্য তখন কাম্যকূপে প্রাণত্যাগ করে নিজ নিজ কামনা অনুসারে আকবর ও বীরবল রূপে জন্মগ্রহণ করলেন। তাঁদের পূর্বজন্মের স্মৃতি স্মরণ হলো। তখন আকবর ও বীরবল পূর্বের তপস্যাক্ষেত্র প্রয়াগে এলেন এবং  বিবেচনা করলেন এরূপ কূপ কলিযুগে রাখা উচিত নয় যেখানে প্রাণ ত্যাগ করলে যে কোন মানুষ যেকোনো রূপ ধারণ করে জন্ম নিতে পারবে। তাই সিসা গলিয়ে কূপ বন্ধ করিয়ে তার ওপর কেল্লা তৈরি করালেন। অক্ষয় বট কিন্তু রৌদ্র বাতাস বৃষ্টি না পেয়েও কেল্লার মধ্যে জীবিত থেকে গেল। সেই ব্রহ্মচারীর তপোবন কেল্লার অপর পারে আরইন গ্রামে সোমেশ্বর শিবমন্দিরের কাছে ছিল লেখক বলেছেন। এই গ্রামের দক্ষিণে ঝুশীগ্রাম, সেখানে গৌতম মুনির আশ্রম ছিল। 


প্রয়াগে মাঘ মাসে মাঘমেলা হয়। নানা দেশ থেকে মানুষ, রাজা, সাধুসন্ত, আখড়াধারী গোঁসাইরা আসেন। নানাদেশ থেকে মহাজন ও দোকানদারেরা এসে ক্রয়-বিক্রয়ের দোকান করে। ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব পদাতিকদের নিয়ে নিজে সর্বদা তদারক করেন মেলার। যেসব জমিতে যাত্রীরা থাকার অস্থায়ী ঘর করে ও দোকানদারেরা অস্থায়ী দোকান তৈরি করে তার উপর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি চড়া হারে কর ধার্য করে।

                     (চলছে)


এই পর্বে রোজনামচার সময়কাল ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১২৬৩ (২৭ মে ১৮৫৬) থেকে ১০ পৌষ ১২৬৩ (২৫ ডিসেম্বর ১৮৫৬)



প্রিয় পাঠক: আপনার মতামত আমার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ! অনুগ্রহ করে একটি মন্তব্য করুন এবং এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার চিন্তাভাবনা শেয়ার করুন। আমি আপনার প্রতিক্রিয়া জানার জন্য আগ্রহী!

২টি মন্তব্য:

  1. দিল্লি ,প্রয়াগরাজ ,ত্রিবেণী সঙ্গমের বিবরণ আকর্ষক। প্রয়াগে মাঘ মাসের মেলার বর্ননাও বেশ সুন্দর ,আকবর বীরবলের অদ্ভুত গল্পটিও বেশ আকর্ষণীয়।সব মিলিয়ে পর্ব টি চমৎকার। শিউলি

    উত্তরমুছুন