সেকালের বাঙালিদের ভ্রমণ ধারাবাহিক
------- সুমনা দাম
(আগের পর্বের পরে)
আগস্ট ১৮৮৬-তে লেখক সমুদ্রপথে স্কটল্যান্ড যাত্রা করলেন। টেমস নদী হয়ে নর্থ সি হয়ে জাহাজ চলল। ক্রমে এডিনবরা শহরের লীথ বন্দর এল। এডিনবরা ছবির মত সুন্দর শহর। কাসেল পাহাড়, সলসবেরি পাহাড়, কার্লটন পাহাড় থেকে নীচের দৃশ্য অত্যন্ত মোহময়। এডিনবরায় প্রিন্সেস স্ট্রীট প্রিন্সেস স্ট্রীট গার্ডেন্স, সেন্ট জাইলজের গথিক ক্যাথিড্রাল, কাউন্টি স্কোয়ার এবং হলিরুডে মেরি কুইন অফ স্কটস ও অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিদের দর্শনীয় জিনিস ও কক্ষ দেখলেন। স্যার ওয়াল্টার স্কট-এর মনুমেন্ট দেখলেন।
পরদিন তিনি পার্থে গেলেন। লক (স্কটল্যান্ডে লেককে লক বলে) লেভেনের নীল জলে অপূর্ব পরিবেশে ট্রাউট মাছ শিকার করা দেখলেন। পার্থ থেকে পিটলর্কি নামক হাইল্যান্ডের একটি ছোট স্টেশনে পৌঁছলেন লেখক। সেখান থেকে কিলি-ক্রাঙ্কি গিরিপথ অতিক্রম করে ব্লেয়ার অ্যাটোলে গেলেন পায়ে হেঁটে। এই পথ বহু সংকীর্ণ গিরিপথ, গভীর গিরিখাত, নদী পার হয়ে যেতে হল। সেখান থেকে টিল্ট নদীর গিরিখাত দিয়ে ১৬ মাইল দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে অতিক্রম করলেন। দুপাশে পাহাড়ের গায়ে কার্পেটের মতো সবুজ গুল্ম, চমৎকার আবহাওয়া আর নদীর গর্জন সেই যাত্রাকে অতি মনোরম করে তুলেছিল। সন্ধ্যার সময় ডী নদীর সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে দেখলেন সেখানে নদী কি অসম্ভব সংকীর্ণ আর ভয়ংকর স্রোতস্বিনী হয়ে উঠে। এইখানে কবি বায়রন একবার প্রায় মৃত্যু মুখে পতিত হয়েছিলেন। সেখানে হাইল্যান্ড কুটিরে থাকার সময় অ্যাংলো ইন্ডিয়ান বালককে দেখে দেশীয় বলে এক স্নেহ অনুভব করলেন লেখক।
এবার লেখক ব্যালাটার অভিমুখে যাত্রা করলেন। প্রথমে সম্রাজ্ঞীর হাইল্যান্ড নিবাস ব্যালমোরাল দেখলেন। তারপর প্রিন্স অফ ওয়েলসের অ্যাবারগেলডি এস্টেট দেখলেন। তুষারাবৃত লকনেগার পর্বতশৃঙ্গ দেখলেন। এই অঞ্চলে অনেক খামারবাড়ি আছে। স্থানীয়রা লেখককে মাননীয় অতিথি জ্ঞানে হুইস্কি ও চা দিতে লাগল। এক স্থানে অনেক গৃহহীন নারী-পুরুষ ভবঘুরের দেখা পেলেন লেখক। এরা ঘুরে বেড়ায় আর ভিক্ষা করে খায়।
ব্যালাটার থেকে রেলপথে তিনি অ্যাবারডিনে আসেন। এটি সমুদ্রের তীরে অবস্থিত একটি উন্নত শহর। এখানে হেরিং মাছ ধরা হয় বাণিজ্যিকভাবে। এছাড়া অয়েস্টার, চিংড়ি, কাঁকড়া প্রভৃতি পাওয়া যায়। এবার লেখক গেলেন কিলিন পিয়ারে। লক টে ছোট স্টিমারে পার হয়ে আসা সবুজ ঘাসে ঢাকা ঢালু তীর, উচ্চ ভূমিতে ঘন গাছের জঙ্গল, পাতা ঝরা গাছের হেমন্তকালীন হলুদ রঙের পাতা ও সুউচ্চ পর্বতশৃঙ্গ দেখে রূপকথার জগতের দৃশ্য বলে লেখকের মনে হয়েছে। লক টে হ্রদে একটি ছোট দ্বীপ আছে, তাতে একটি প্রাচীন ক্যাসেলের ভগ্নাবশেষ আছে। এরপর ডালম্যালী হয়ে কিলচার্নে এলেন। রেলপথ অ হ্রদের পাশ দিয়ে কিছুদূর গেছে। আক-না-কুইট নামক স্থান থেকে লক এটিভহেড পর্যন্ত একটি ছোট স্টিমার যাতায়াত করে। এরপর কোনেল ফেরী স্টেশন হয়ে লক নেলে এলেন। সেখান থেকে ফোর্ট উইলিয়াম ও বেন নেভিসের দৃশ্য অতি মনোরম।
ওখানে কদিন কাটিয়ে তিনি গ্লাসগো গেলেন স্টিমারে। গ্লাসগো পৃথিবীর একটি বৃহত্তম শহর ও বাণিজ্য বন্দর। গ্লাসগোতে লেখক জর্জ স্কোয়ারে অনেক বিখ্যাত ব্যক্তির মূর্তি ও স্যার ওয়াল্টার স্কটের বৃহৎ মূর্তি, নিউ ইউনিভার্সিটি, মিউজিয়াম দেখলেন। লেখক এবার ঘোড়ার গাড়িতে ট্রোসাক্স অভিমুখে যাত্রা করলেন। এই পথ কিছুদূর পর্যন্ত লক ভেনাচারের পাশ দিয়ে গেছে। উপকূল ঘন অরণ্য বেষ্টিত, অনেক ছোট নদী গিয়ে হ্রদে পড়েছে। লক আক্রেকে পিছনে ফেলে তাঁরা ট্রোসাক্স গিরিসংকটে প্রবেশ করলেন। ডান পাশে বেন এলাম ও বাঁ পাশে বেন ডেনু নামের খাড়া পাহাড় ঘন অরণ্যে আবৃত। ট্রোসাক্সের অন্য প্রান্তে লক ক্যাট্রিল। পূর্বে এখানে এত সহজে আসা যেত না। খাড়া পাহাড়ের গায়ে ধাপ কেটে গাছের ডালের সঙ্গে দড়ি বেঁধে তৈরি ল্যাডার বা মই পথ শুধুমাত্র ছিল। এখন ভালো রাস্তা হয়ে যাওয়ায় সহজে আসা যায়। একটি ছোট স্টিমারে হ্রদের ওপর পারে গেলেন তাঁরা।
স্কটল্যান্ড থেকে ফিরে, ১৮৮৬ -এর অক্টোবরে তিনি অক্সফোর্ড যান। সেখানকার ক্রাইস্ট কলেজ, কুইন্স কলেজ, ম্যাকডোনাল কলেজ, সেখানকার ক্যাথিড্রাল, মিউজিয়াম, গ্রন্থাগার, মানমন্দির দেখেন। অক্সফোর্ডে যে হোটেলে ছিলেন সেটি সম্পূর্ণভাবে এক মহিলার পরিচালনাধীন। লেখক ইউরোপে মেয়েদের হোটেলে, দোকানে, পানশালায়, ডাকঘরে, কলকারখানায় দায়িত্বপূর্ণভাবে কাজ করতে এবং মধ্যরাত্রি পার হয়েও কাজ করতে দেখেছেন, যেটি সেই সময় ভারতে ভাবনার অতীত ছিল।
ইংল্যান্ডের শেষ কয়দিন লেখক লন্ডন ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের দর্শনীয় স্থান দেখে বেড়ালেন। দুবার পার্লামেন্টে গিয়ে অধিবেশন দেখলেন। ক্লক টাওয়ারে বিগ বেন ঘন্টা দেখলেন। ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে রাজাদের রাজ্যেভিষেক হয়। আবার রাজা রানীদের ও বহু বিশিষ্ট ব্যক্তির সমাধি, স্মৃতিফলক এখানে রয়েছে। টাওয়ার অফ লন্ডন পরিদর্শন করলেন তিনি। এখানে অতীতে ইংল্যান্ডের রাজা বহির্শত্রুর আক্রমণের সময় নিরাপত্তার জন্য আশ্রয় নিয়েছেন। এখানে ইংল্যান্ডের ক্রাউন জুয়েল বিখ্যাত কোহিনুর রক্ষিত আছে। ইতিহাসখ্যাত অনেক ব্যক্তিকে এখানে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। রাজাদেশে অনেকের শিরশ্ছেদও এখানে করা হয়েছে। লেখক এক দিন সেন্ট পলস ক্যাথিড্রালে প্রার্থনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অন্যান্য যা যা তিনি দেখলেন তা হল জিওলজিক্যাল গার্ডেন, বোটানিক্যাল গার্ডেন, ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ড, ন্যাশনাল গ্যালারি, হ্যাম্পটন কোর্ট, এক্সচেঞ্জ, কেনসাল গ্রিন-এর সমাধিক্ষেত্র (এখানে দ্বারকানাথ ঠাকুরকে সমাহিত করা হয়েছে), মাদাম তুসোর মোমের মূর্তি প্রদর্শনী প্রভৃতি। ব্রিটিশ মিউজিয়ামে যে বহু বিচিত্র জিনিস আছে তা অনুশীলন করতে একটি জীবন কেটে যাওয়ার কথা বলেছেন লেখক।
অবশেষে ১৩ ডিসেম্বর ১৮৮৬ ইংল্যান্ড ত্যাগ করে হল্যান্ডের রোটারডাম অভিমুখে যাত্রা করলেন লেখক। পরদিন নদীর উপর দিয়ে স্টিমারে যেতে যেতে দু'পাশে হল্যান্ডের প্রচুর উইন্ড মিল দেখতে পেলেন। হল্যান্ডের হার্লেম শহরে এলেন তাঁরা। এখানকার মিউজিয়াম দেখলেন। ডাচ উপনিবেশ ভুক্ত জাভা, সুমাত্রা, বোর্ণীও ফিলিপিন্স প্রভৃতি অঞ্চলে নানা দ্রব্য সেখানে রাখা আছে। এরপর লেখক গেলেন আর্মস্টারডাম। সেখানে জুওলজিক্যাল গার্ডেন, একুরিয়াম, মিউজিয়াম দেখলেন। উত্তর সাগরের খাল ও উত্তর হল্যান্ডের খাল জার্মান সমুদ্রের সঙ্গে আর্মস্টারডামকে যুক্ত করেছে। শহরটিও অনেক খাল দিয়ে ৯৫ টি দ্বীপে বিভক্ত ও পরস্পর ৩০০ টি সেতু দ্বারা যুক্ত। মাটি নরম তাই বহু কাঠ (পাইল) পুঁতে তার ওপর নগর নির্মিত হয়েছে। ১৪০০০টি পাইলের উপর দাঁড়িয়ে আছে রাজপ্রসাদটি।
ফ্রান্সের প্যারিস পরবর্তী গন্তব্য। এই সুন্দরতম শহরটি রাস্তা, পার্ক, প্রাসাদ দিয়ে সুসজ্জিত। প্যারিসে লেখক জীববিজ্ঞানের মিউজিয়াম, ইডেন থিয়েটার, নিউ অপেরা দেখলেন। মাথায় পাগড়ি পড়ে থাকার জন্য লেখক খাতির পেতে থাকলেন। কিন্তু ইংরেজি ছাড়া ইউরোপীয় অন্য ভাষা না জানায় লেখক তাদের কথাবার্তা উপভোগ করতে পারলেন না। তিনি বুলভারে বেড়ালেন, সাঁঝে লিজেতে সদা স্ফূর্তিমান মানুষের ভিড় দেখলেন। ট্রিয়ফ দ ল এতোয়াল, নেপোলিয়নের বিজয় উপলক্ষে নির্মিত স্মৃতি তোরণ দেখলেন, ল্যুভর মিউজিয়াম দেখলেন, দ্বাদশ শতাব্দীতে নির্মিত নতরদাম ক্যাথিড্রাল দেখলেন। তাছাড়া লা শ্যাত শ্যাপেল, পাত্থিনান দেখলেন।
প্যারিস থেকে গেলেন রাইন নদীর ধারে জার্মানির শহর কোলন বরফ পাতের মধ্যে। কাথিড্রল ও চার্চ দেখলেন। এখানে ওডিকোলন তৈরি হয়। রেলে এবার তিনি বার্লিন গেলেন ৩১শে ডিসেম্বর ১৮৮৬। জার্মানির রেল কামরাগুলিতে গরম রাখার জন্য ব্যবস্থা আছে। কামরার দেওয়ালে একটি ডায়াল সংযুক্ত আছে, তার হাতল ঘুরিয়ে কামরা বেশি গরম বা কম গরম করা যায়। বার্লিনে যে হোটেলে উঠলেন সেখানে বিদ্যুতের আলোর ব্যবস্থা আছে। রাত দিন তুষারপাত হচ্ছিল কিন্তু পাইপের সাহায্যে হোটেলে ৭০ ডিগ্রি ফারেনহাইট মাত্রা তাপ সর্বদা রক্ষিত হতো।
বার্লিন থেকে লেখক অস্ট্রিয়ার ভিয়েনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। টেটশেন নামক স্থানে অস্ট্রিয়ার সীমান্ত এল। ভাষাগত সমস্যার জন্য বুঝতে না পেরে সেই ট্রেনেই বসে রইলেন তিনি। অনেক পরে টিকিট কালেক্টর এসে টিকিট পরীক্ষা করে চড়া হারে মাশুল চাইলেন কারণ এই রেল অন্য গন্তব্যে যাবে। লেখক অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলেন যে তিনি না বুঝে এই ট্রেনে যাত্রা করছেন ও মাশুল দেবেন না। কিন্তু তারা কিছু তেমন বুঝলো না। একটি ছোট স্টেশনের রেল থামিয়ে লেখককে জোর করে নামিয়ে দিল এবং সঙ্গে মালপত্র লাইনে ছুঁড়ে ফেলে দিল। গভীর রাতে চতুর্দিকে তুষারপাতের মধ্যে লেখক একা বোহেমিয়ার পাহাড়ি অঞ্চলে চরম অসহায় বোধ করতে লাগলেন। অবশেষে লেখক লাইন থেকে অতি কষ্টে মালপত্র সংগ্রহ করে স্টেশনে স্টেশন মাস্টারের কাছে পৌঁছালেন এবং তাকে আকার ইঙ্গিতে বোঝানোর চেষ্টা করলেন ভিয়েনা কিভাবে যাবেন। লোকটি খুব একটা সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক না হলেও টাকার বিনিময় একটি পোর্টার জোগাড় করে, পোর্টারকে কি সব বলে দিল। লেখকের জিনিস নিয়ে পোর্টার চলতে থাকল আর লেখক তাকে অনুসরণ করতে লাগলেন। প্রথমে তুষার কয়েক ফুট গভীর হয়ে উঠল আর খুব পিছল। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁরা একটা পাহাড়ে উঠতে থাকলেন। তিনি ভাবলেন পা পিছলে পড়লে বরফে গড়িয়ে নীচে পড়ে যাবেন। অনেকদূর গিয়ে একটি বড় নদীর ওপর একটা কাঠের সেতু পার হলেন। লোকটি লেখকের থেকে যে কটি রৌপ্য মুদ্রা ছিল তা নিয়ে গিয়ে বোধহয় টোল দিল। রাত্রি প্রায় তিনটের সময় একটা ছোট শহরে এসে পৌঁছলেন তাঁরা। বড়দিন উপলক্ষে আধা জাগ্রত সেই শহর। একটি বড় বাড়ির কাছে এসে লোকটি লেখকের থেকে অবশিষ্ট স্বর্ণ মুদ্রা নিয়ে ভাঙাতে চলে গেল। লেখক তখন অত্যন্ত ক্লান্ত ও নিদ্রাকাতর হয়ে আধখোলা একটা দরজায় হেলান দিয়ে চোখ বুজলেন। কিছুক্ষণ পরে একটি লোক তাঁর সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে দুজনেই পড়ে গেলেন। লোকটি পড়ে গিয়ে নাক ডাকিয়ে ঘুমোতে লাগল। লেখক ভাবলেন যদি লোকটি ঠান্ডায় মারা যায় তাই তিনি তাকে টেনে দেয়ালের কাছে এনে হেলান দিয়ে বসালেন। সে জ্ঞান ফিরে পেয়ে রাগে চিৎকার করে কি সব বলতে লাগল। এবার পোর্টার ফিরে এসে লেখককে নিয়ে আরো কিছু দূরে গিয়ে একটা হোটেলে পৌঁছাল। সেখানে বাকি রাত্রি হোটেলে কাটিয়ে সকালে ট্রেন ধরতে হবে এটুকু লেখক বুঝলেন পোর্টারের দেওয়া একটা কাগজে আউসসিগ ও ৯-১৮ লেখা দেখে। অর্থাৎ শহরটির নাম আউসসিগ এবং তাঁকে ৯ টা ১৮ তে ভিয়েনা যাওয়ার ট্রেন ধরতে হবে। পরদিন দেখা গেল যে লেখকের এই অনুমান সত্যি। নিকটস্থ স্টেশন থেকে তিনি ভি যাওয়ার ট্রেন ধরতে পারলেন। প্রবল তুষার সমুদ্রের মধ্যে দিয়ে ট্রেন ছুটে চলল। মাঝে অসংখ্য ছোট পাহাড়, ঘন পাইন বন সহ গ্রামগুলি ছবির মতো দেখাচ্ছে। মাঝে মাঝে প্রাচীন ক্যাসেল দেখা যাচ্ছে।
ভিয়েনা শহরটি প্যারিসের মতো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও প্রাসাদোপম অট্টালিকাময়। তিনি সেখানে রাজপ্রাসাদ, মিউজিয়াম, গ্রন্থশালা দেখলেন। ২৭শে ডিসেম্বর ভিয়েনা ছেড়ে চললেন লেখক। রেলপথে অস্ট্রিয়ার আল্পসের মধ্যে দিয়ে পথ।
রাতে এসে ইতালির ভেনিস পৌঁছলেন। ইতালির ভেনিসে গাইড রিফালটোতে একটি বাড়ি দেখিয়ে শাইলক এই বাড়িতে টাকা রাখতো বলে পরিচয় দিল। লেখক পিয়াতসা অর্থাৎ স্কোয়ার অফ সেন্ট মার্ক দেখলেন। তিনি এবার ফ্লোরেন্স এলেন। ফ্লোরেন্স ফুলের শহর। এখানকার আশ্চর্য সুন্দর চিত্র, ভাস্কর্য, মূর্তি, রাফায়েল-মাইকেল অ্যাঞ্জেলো প্রমুখের শিল্পকীর্তি দেখে মুগ্ধ হলেন।
ফ্লোরেন্স থেকে তিনি রোমে এলেন ১৮৮৬ র ৩১ ডিসেম্বর। রোমে তিনি ভ্যাটিকান দেখতে পারেননি কারণ তখন ছুটি ছিল এবং অনুমতি সংগ্রহ করার মত সময় তাঁর ছিল না। রোমে তিনি কলোসিয়াম, ফ্ল্যাবিওন অ্যামফি-থিয়েটার দেখলেন। এরপর তিনি ভিসুভিয়াসের লাভা স্রোতে ঢাকা পরা পম্পেই দেখে নেপলস্ এলেন। নেপলস্-এ মিউজিয়াম, অ্যাকোরিয়াম, ভূগর্ভস্থ সমাধি, আর্ট গ্যালারি দেখলেন।
নেপলস্ থেকে লেখক ব্রিন্দিসি চলে এলেন। সেখান থেকে জাহাজ তাঁকে আলেকজান্দ্রিয়া পৌঁছে দিল। অবশেষে ৩ জানুয়ারি, ১৮৮৭ সকালে ইউরোপ ত্যাগ করে সাধারণ ডাক পরিবহনের পথে তিনি দেশে ফিরে গেলেন, প্রায় নয় মাস ইউরোপে বাস করার পর।