সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
৩৬। ভ্রমণকারি বন্ধুর পত্র - ঈশ্বর চন্দ্র গুপ্ত
শুক্রবার, ৩০ আগস্ট, ২০২৪
৩৫। তীর্থ ভ্রমণ ২০ যদুনাথ সর্ব্বাধিকারী
সেকালের বাঙালিদের ভ্রমণ ধারাবাহিক
------- সুমনা দাম
(আগের পর্বের পরে)
বহরমপুর থেকে নৌপথে রাঙামেটে (রাঙ্গামাটি), কাঁঠালের বাজার (?), সাটুইয়ের বাজার (?), মালঞ্চ (মালঞ্চ, মুর্শিদাবাদ) এক এক করে পার হলেন লেখক যদুনাথ সর্ব্বাধিকারী ও তার সঙ্গীরা। মুর্শিদাবাদ থেকে মালঞ্চ পর্যন্ত গঙ্গায় অনেক চড়া আছে। দুই দিকে চড়ার মধ্যে স্থানকে বলে মসিনা। সেখানে জল খুব গভীর। মসিনাতে জলে নৌকো উল্টে যাওয়া সম্ভাবনা খুব বেশি তাই খুব সাবধানে নৌকা চলতে লাগলো। একে একে কপোলেশ্বর (?), কালিগঞ্জ (কালিগঞ্জ, নদীয়া), শিরনি, নলেপুর (?), বেলহারিগঞ্জ (?) হয়ে বর্তমান পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া এলো। কাটোয়ার আগে অজয় নদীর মোহনা।
কাটোয়ায় অনেক বাজার ও ধনী লোকের বাস আছে। এই কাটোয়াতে শ্রীচৈতন্যদেব ভারতী গোঁসাই-এর (কেশব ভারতী) কাছে মন্ত্র নিয়েছিলেন। এখানে মহাপ্রভুর মন্দির আছে, আছে বকুল গাছ, ষড়ভুজ গৌরাঙ্গ ও রাধাকান্তের রাধামাধব বাটি (কাটোয়া রাধাকান্ত বাড়ি মন্দির)। এবার দাঁইহাট-দেওয়ানগঞ্জ (পূর্ব বর্ধমান) মাটিয়ারী (নদীয়া) হয়ে এলো অগ্রদ্বীপ (পূর্ব বর্ধমান)। সেখানে তাঁরা বাসু ঘোষের গোপীনাথ মূর্তি দর্শন করলেন। (কিন্তু, অগ্রদ্বীপে ভক্ত গোবিন্দ ঘোষের কাছে এসেছিলেন শ্রীচৈতন্য। এখানে তিনি কৃষ্ণের এক বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করে দেন যার নাম গোপীনাথ। লেখক কি গোবিন্দ ঘোষ কে বাসু ঘোষ লিখেছেন?)।
ক্রমে গঙ্গানদী পাটুলী (পূর্ব বর্ধমান), বেলপুথুরিয়া (?), নদীয়ার সোনাডাঙ্গা, কেশেডাঙ্গা হয়ে খড়িয়া (জলঙ্গি) নদীর সঙ্গে মিশে ত্রিমোহনী হয়েছে। এরপর এলো নবদ্বীপ সেখানে অনেক চতুষ্পাঠী আছে। গঙ্গার ভাঙ্গনে চৈতন্যদেবের জন্মস্থান, জগন্নাথ মিশ্রের বাড়ি গঙ্গাগত। ভক্তরা গৌরাঙ্গের প্রতিমূর্তি তৈরি করেছেন। নবদ্বীপের বৈষ্ণবরা অনেকে মহাপন্ডিত। এখানকার বুড়া শিব ও পাটল দেবী (পোড়ামাতলা কি ?) খুব জাগ্রত। পরদিন মির্জাপুর (?), মথুরাপুর (?) হয়ে কালনায় পৌঁছানো হলো।
বর্ধমানের রাজা তেজচাঁদ সামসেরজঙ্গ অম্বিকা কালনায় দেবালয় স্থাপন করেছিলেন। শ্রীকৃষ্ণচন্দ্র মন্দির, লালজির মন্দির, রাসমণ্ডপ, রাজার বৈঠকখানা, ১০৮ টি মণ্ডলাকৃতি শিব মন্দির একে একে দর্শন করলেন। এটি রাজার দেবোত্তর সম্পত্তি। পূজা, অতিথি সেবার উত্তম বন্দোবস্ত আছে। কালনা পেরিয়ে সাতগেছে (সাতগাছিয়া), গুপ্তিপাড়া এলো, অপর পাড়ে শান্তিপুর। শান্তিপুর অনেক বৈষ্ণব গোস্বামী ও ব্রাহ্মণ পন্ডিতের বাসস্থান। এখানে তাঁতের মিহি কাপড় তৈরি হয়।
এরপর গঙ্গার দুই পাড়ে একে একে গুপ্তিপাড়া, জিরেট (জিরাট), বলাগর, চাকদহ, সুখসাগর, শিজেডুমুরদহ (ডুমুরদহ) এলো । ডুমুরদহ কেশবরাম, গুমানরায়ের বাড়ি। তারা নৌকায় ডাকাতির সৃষ্টি কর্তা (রঘু ডাকাত ও বিশে ডাকাত কি ? তাদের বাড়ি এখানে ছিল বলে জানা যায়)। তাদের ভয়ে নৌপথে কেউ নির্ভয়ে যাতায়াত করতে পারত না। কলকাতার বাগবাজারের ঘাট পর্যন্ত তাদের বোম্বেটের (জলদস্যুর) নৌকা ঘুরে বেড়াতো। এবার এলো মগরা, ত্রিবেনী, বাঁশবেড়িয়া, ত্রিবেণী। ত্রিবেণীতে দক্ষিণ মুখী গঙ্গা, পশ্চিমমুখী সরস্বতী ও পূর্বমুখী যমুনা যুক্ত হয়েছে। একে মুক্তবেণী বলে। এখানে স্নান তর্পণ করা হলো।
এরপর রাজা নৃসিংহদেব স্থাপিত হংসেশ্বরী ঠাকুরবাড়ি (বাঁশবেড়িয়া) দেখা হল। মূর্তি অতি চমৎকার। মহাকালের নাভি থেকে উৎসারিত এক পদ্মের মৃণাল, তার নিকটে এক হংসের পিঠে পদ্মাসনে চতুর্ভুজা দেবীমূর্তি। মন্দিরের আকার যন্ত্রাকৃতি। উপরের শৃঙ্গে নানা দেবদেবীর মূর্তি স্থাপিত। এরপর এলো হুগলি। সেখানে প্রাণকৃষ্ণ হালদার নামে চুঁচুড়ার এক অতি ধনী বাবুর নাচঘরে তখন হুগলি কলেজ হয়েছে। মোহম্মদ মসিনের (মহসিন) ইমামবাড়ী অতি উত্তম। চুঁচুড়ায় আছে নাচঘর (বাবু প্রাণকৃষ্ণের কি? এখন তাতে কি হয়েছে?)। তার দুই ক্রোশ দূরে ফরাসডাঙ্গা (চন্দননগর)। এখানে ফরাসিদের রাজ্য (১৯৫০ পর্যন্ত)। খুব সুন্দর শহর ভালো রাস্তা, ভালো বাড়ি, বাজার আছে।
এভাবে ক্রমে ক্রমে আসে ভদ্রেশ্বর, গোরুটির বাগ (গৌরহাটি), বৈদ্যবাটি, নিমাই তীর্থের ঘাট (বৈদ্যবাটি), শেওড়াফুলি, নিস্তারিনির বাড়ি (শেওড়াফুলি)। পূর্বপাড়ে একে একে কাউগাছি (জগদ্দল), টিটাগড় মণিরামপুর (ব্যারাকপুর); পশ্চিম পাড়ে দেবগঞ্জ (?), সাধু বাবুর বাজার (?), শ্রীরামপুর আসে। শ্রীরামপুরে মার্শম্যান সাহেবের ছাপাখানা। শ্রীরামপুর পূর্বে দিনেমারদের (ডেনমার্কের) অধীন ছিল, এখন কোম্পানি বাহাদুরের রাজ্য। এছাড়া শ্রীরামপুরের রাধাবল্লভজির মন্দিরের উল্লেখও করেন। তারপর এলো মাহেশ (জগন্নাথদেবের মন্দির), রিষড়া, কোন্নগর, কোতরং, উত্তরপাড়া। পূর্বপাড়ে বিশালক্ষীর দহ (টিটাগড়), খড়দহ, রামহরি বিশ্বাসের দ্বাদশ শিবস্থাপন (খড়দা ২৬ মন্দির), বান্ধাঘাট (?), শ্যামসুন্দর ঘাট, সুখচর, পানিহাটি, এড়িয়াদহ (আড়িয়াদহ)।
পূর্ব পাড়ে নসরাই (যেখানে ম্যাগাজিন ?), রাসমনির নবরত্ন শিবালয় (দক্ষিণেশ্বরে রানী রাসমনির প্রতিষ্ঠিত মা ভবতারিণীর মন্দির গঠনে নবরত্ন ধাঁচের আর শিব মন্দিরগুলি আট চালা। দক্ষিণেশ্বর শিবের নাম। ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে যখন মন্দিরের উদ্বোধন হয়েছিল তখন লেখক তীর্থ ভ্রমণ করছিলেন অন্য প্রদেশে। তাই তিনি জানতেন না নবরত্ন মন্দিরটি কালীঠাকুরের। নৌকোয় যেতে যেতে দেখে নিশ্চয়ই তিনি মনে করেন বড় নবরত্ন মন্দিরটি দক্ষিণেশ্বর শিবের মন্দির)।
পশ্চিমপাড়ে ভদ্রকালী, উত্তরপাড়া, বালি, বারাকপুর (?), ঘুসড়ি (ঘুসুড়ি), শালিখা (সালকিয়া), গোলাবাড়ির ঘাট, নিমকের গোলা (নমক গোলাঘাট), হাবড়া (হাওড়া) যে স্থানে রেল রোড। তারপর রামকৃষ্ণপুর, শিবপুর; পূর্ব পাড়ে কাশীপুর, চিৎপুর, সুরের বাজার (?), বাগবাজারের বান্ধাঘাট, বাগবাজারের অন্নপূর্ণা ঘাট (আগে বাগ বাজারে অনেকগুলি গঙ্গার ঘাট ছিল)। অন্নপূর্ণা ঘাটে নৌযাত্রা শেষ হলো।
পালকি করে কলকাতার বাসায় এলেন লেখক। সেখানে পুত্র, জামাতা এদের সঙ্গে প্রায় পৌনে চার বছর পরে পুনর্মিলন হোল। এরপর তিনি রেলগাড়িতে কোন্নগর পর্যন্ত গেছিলেন।
অবশেষে সাত অগ্রহায়ণ কলকাতার বমশালের ঘাট (সম্ভবতঃ ব্যাংকশাল রোডের ঘাট) থেকে নৌকা যাত্রা করেন বাড়ি রাধানগরের উদ্দেশ্যে। পথে দেখেন কলে জল উঠছে, খিদিরপুরে গঙ্গার পুল দেখেন, কোম্পানির বাগান বা শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন, 'যেখানে সবরকম বৃক্ষলতা আছে'। এবারের অন্য পথের নৌযাত্রায় সাঁকরাল (সাঁকরাইল), বাউরিয়া, বজবজ, উলুবেড়িয়া হয়ে নুরপুর, গেঁওখালি বাজারে গঙ্গা থেকে নৌকা রুপনারায়ণ নদীতে প্রবেশ করল।
এরপর রূপনারায়ণ নদী ধরে নৌকো চললো। তমলুক (এখানে বর্গভীমার মন্দির আছে বলে লেখক লিখেছেন), কাঁটাপুকুর (কাঁটাপুকুর, পূর্ব মেদিনীপুর) কোলা (কোলাঘাট), মুন্সিরহাট (? , এটি বর্তমান হাওড়া জেলার মুন্সিরহাট নয়), ভাটরা (ভাটোরা, হাওড়া), ধনডাঙ্গা (ধলডাঙ্গা, হাওড়া), হেনর ঘাট (?), জগৎপুর ( জগৎপুর, হুগলী), তিতুর পাড়ার ঘাট (?) হয়ে নৌকো গড়ের ঘাটে (জগৎপুর, হুগলী) পৌঁছাল। তারপর পালকিতে করে সেনহাট, খানাকুল, রামনগর বাজার ইত্যাদি পেরিয়ে ৯ অগ্রহায়ণ লেখক তাঁর রাধনগরের বাড়ি ফিরলেন। এইভাবে যদুনাথ সর্ব্বাধিকারী মহাশয়ের পৌঁনে চার বছরের দীর্ঘ তীর্থ ভ্রমণ শেষ হলো।
এই পর্বে রোজনামচার সময়কাল ১২ কার্তিক ১২৬৪ (৭ নভেম্বর ১৮৫৭) থেকে ৯ অগ্রহায়ণ ১২৬৪ (২৪ নভেম্বর ১৮৫৭)
প্রিয় পাঠক: আপনার মতামত আমার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ! অনুগ্রহ করে একটি মন্তব্য করুন এবং এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার চিন্তাভাবনা শেয়ার করুন। আমি আপনার প্রতিক্রিয়া জানার জন্য আগ্রহী!
বৃহস্পতিবার, ২৯ আগস্ট, ২০২৪
৩৪। তীর্থ ভ্রমণ ১৯ যদুনাথ সর্ব্বাধিকারী
সেকালের বাঙালিদের ভ্রমণ ধারাবাহিক
------- সুমনা দাম
বুধবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৪
৩৩। তীর্থ ভ্রমণ ১৮ যদুনাথ সর্ব্বাধিকারী
সেকালের বাঙালিদের ভ্রমণ ধারাবাহিক
------- সুমনা দাম
(আগের পর্বের পরে)
এবার গঙ্গা নদীতে জলপথে প্রয়াগ থেকে কাশী যাত্রা। সারাদিন বজরা চলে। মাঝে মাঝে চড়াইয়ে বজরা নোঙর করে রান্নাখাওয়া হয়। এভাবে চলার পর চতুর্থ দিন এলো বিন্দুবাসিনী বা বিন্ধ্যবাসিনী দেবীর মন্দির। দেবী সিংহবাহিনী, চতুর্ভূজা। তাছাড়া আছেন মহাকালী, মহালক্ষ্মী ও মহাসরস্বতী মূর্তি। গঙ্গাতীর থেকে এক ক্রোশ দূরে পাহাড়ের (বিন্ধ্য পর্বত) উপর যোগমায়া দেবীর অষ্টভূজা মূর্তি সম্বলিত মন্দির। এছাড়া বটুক ভৈরব সহ অন্য নানা দেবদেবীর মন্দির। বিন্দুবাসিনী মন্দিরের চারদিকে পাণ্ডাদের বসতি, অনেক দোকানও আছে। প্রতিদিন মহাকালীর সামনে অনেক বলিদান হয়। বিন্দুবাসিনী মন্দিরের ভিতর এক কক্ষ (কাঠরা) আছে, যার মধ্যে যাত্রীদের ঢুকিয়ে পান্ডারা দরজা বন্ধ করে দেয়। ভোগ ইত্যাদি বাবদ টাকা পয়সা যতক্ষণ না আদায় হয় সেই কক্ষের দরজা তারা খোলে না। সুন্দরী কুমারীরাও পয়সার জন্য মন্দিরে চারপাশে ঘুরে বেড়ায়। অনেক সন্ন্যাসী এই স্থানে তপস্যা করেন।
দুই ক্রোশ দূরে মির্জাপুর (মৃজাপুর) একটি বড় শহর। অনেক বাঙালি এখানে ব্যবসা করে। গঙ্গার ঘাটগুলি পাথরে বাঁধানো ও সেখানে সুন্দর সুন্দর মন্দিরে শিব স্থাপিত আছে। শহরের মধ্যে ইঁট ও পাথরের তৈরি বাড়ি ও মন্দির সুগঠিত। শহরের রাস্তা পাথর দিয়ে তৈরি, নর্দমাও পাথরের। এখানে সরকারি নানা রকম কাছারি আছে।
এবার বজরা এলো চন্ডালগড় (চুনার)। পাহাড়ের উপর কেল্লা। এই কেল্লা পূর্বে চন্দ্ররাজার ছিল, পরে রামনগরের রাজা অধিকার করেছিলেন। এখন তা কোম্পানি অধিকার করেছে। এখানে বেশ কিছু সাহেবদের বাংলো আছে।
চন্ডালগড় থেকে তিন ক্রোশ দূরে ছোট কলকাতা, এখানে সাহেবদের বাংলো, কোম্পানির সেনা ছাউনি আছে বলে এই নাম হয়েছে। এরপর এলো রামনগর এখানে রাজার বাড়ি ও ব্যাসদেব স্থাপিত শিব এবং ব্যাসের মূর্তি আছে। তাই একে ব্যাস কাশীও বলে।
রামনগর থেকে কাশীধামের অসির ঘাট আধ ক্রোশ আর বরণা নদীর ঘাট তিন ক্রোশ। এবার দ্বিতীয়বার লেখক কাশীতে এলেন। পঞ্চক্রোশী কাশী অর্ধচন্দ্রাকৃতি। বিশ্বেশ্বরের মন্দির মহারাজ রঞ্জিত সিংহ সুবর্ণমণ্ডিত করে দিয়েছেন। মন্দিরের অমূল্য রত্ন ভান্ডার আছে। মন্দিরে চারটি দ্বার। পশ্চিম দ্বারের সামনে নাটমন্দির। তার মধ্যে রাজা হরিশচন্দ্রের স্থাপিত শিব। এছাড়া চতুর্দিকে পার্বতী, অন্নপূর্ণা, অবিমুক্তেশ্বর প্রভৃতি দেবদেবীর মন্দির আছে। উত্তরদিকে জ্ঞানবাপী নামে এক কূপ আছে। মুকুন্দ ব্রহ্মচারী (প্রয়াগ সংক্রান্ত পর্ব দর্শণীয়) যখন কাশীধামে আসেন, বিশ্বেশ্বররের পূজার জলের সন্ধানে মাটি নিজের হাতের মুঠির আঘাত করলে যোগবলে ভগবতী উঠে আসেন, এই সেই কূপ।
উত্তর দিকে বিশ্বেশ্বরের পুরনো মন্দির আছে। বিশ্বেশ্বর গুপ্ত হয়েছেন সেখানে কারণ আওরঙ্গজেব বাদশাহ ওই মন্দিরের প্রতি "অত্যাচার করে" মসজিদ ও বিশ্বেশ্বরের মন্দির ভেঙে তার উপরে আপন কবরস্থান নির্মাণ করেছেন (যদিও তাঁর কবর আওরঙ্গবাদ, মহারাষ্ট্রতে)। কাউকে সেখানে তারা ঢুকতে দেয় না। কেউ কেউ (হিন্দু) বহু স্তব স্তুতি করে ও রক্ষকদের পুরস্কার দিয়ে ওই স্থানে যোগ সাধনে যেতেন বলে শোনেন লেখক।
এরপর লেখক কাশীধামের প্রধান তীর্থস্থানগুলি বর্ণনা করেন। যেমন অন্নপূর্ণা, কেদারঘাটে কেদারেশ্বর, শ্মশানেশ্বর, তিলভাণ্ডেশ্বর, লোলার্ক তীর্থ, দুর্গাকুণ্ড। কাশীধামের যাত্রাগুলির বিষয়েও তিনি বলেন। দক্ষিণ মানস যাত্রা, পশ্চিম মানস যাত্রা, উত্তর মানস যাত্রা, এ ছাড়া পাঁচ, সাত ও নয় দিনের পঞ্চক্রোশী যাত্রাও করেন পুণ্যার্থীরা।
উত্তর মানসের একটি তীর্থস্থল হলো লাট ভৈরব। এখানে ভৈরবের দন্ড ও ভৈরবের যাতা আছে। কাশীতে পাপকর্ম করলে ভৈরবের দন্ড ও যাতাতে ছয় হাজার বছর ধরে পেষিত হতে হয় বলে প্রচলিত আছে। এই যাতা নিয়ে হিন্দু ও মুসলমানের বিবাদ হয়। ওই স্থানে মুসলমানেরা মসজিদ করতে শুরু করলে হিন্দুরা বাধা দেয় ও মুসলমানদের পরাভূত করে। পরে রাতে মুসলমানেরা যাতার চারদিকে আগুন দেয়, কিন্তু যাতার হানি হয় না। এবার গোরক্ত দিয়ে আগুন দেওয়া হলে যাতা ভেঙ্গে যায়। সকালে হিন্দু-মুসলমানের দাঙ্গা শুরু হয়। তখন কাশীর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মাধ্যক্ষ জজ রেনলিক হিন্দুদের অনুমতি দেন মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার। হাজার হাজার মুসলমান হত হয়। যারা বেঁচে গেল তাদের মুখে শূকরের রক্ত, গোবর ইত্যাদি দিয়ে, কর্ণচ্ছেদ করে, মুসলমানদের দেবালয়ে শুকর ছেদন করে, তাদের স্ত্রীগণের দুরবস্থা করে হিন্দুরা অত্যাচার চালায়। অনেক মুসলমান দেশ ত্যাগ করে। পরে সাহেবরা এসে হিন্দুদের শান্ত করে তাদের তামার যাতা তৈরি করে দেন। এখন সেই যাতাই আছে।
কাশী শহরের বাড়িগুলি পাথরের তৈরি। বড় বড় তিন থেকে পাঁচতলা উঁচু। দুপাশে বাড়ির মাঝে দেড় হাত প্রমাণ গলিপথ। শহরে পাঁচ হাজার ফটক আর এক এক ফটকের মধ্যে পাঁচ, ছয়, সাতটি গলি আছে। গলিতে ঢুকে পথ চেনা খুব শক্ত। কাশীতে অনেক চক ও বাজার আছে। তাছাড়া প্রতি মহল্লাতে অনেক দোকান ও পানের দোকান আছে। সাটিন, মখমল, বারাণসী তিল্লার কাজে নীলাম্বরী পীতাম্বরী শাড়ি পাওয়া যায়।
কাশীতে তীর্থদর্শনের বর্ণনা প্রথমবার কাশী ভ্রমণপর্বে দেওয়া হয়েছে বলে এখানে আর পুনরাবৃত্তি করা হলো না।
এবার লেখক বাড়ি ফেরার জন্য উদ্যোগী হলেন। নানারকম বাধাবিঘ্নের পর জ্যৈষ্ঠমাসে নৌকায় গমনের কথা হলে মাঝি বললো যে এখন ঝড়-বৃষ্টি সময়ে নৌকায় যাওয়া যাবে না। আষাঢ়মাসে যাওয়া যেতে পারে। সঙ্গীরা জলপথে না দিয়ে ডাকগাড়িতে (ঘোড়ার গাড়ি) যাওয়া কথা ঠিক করলেন। তখন খবর এলো মিরাট ও দিল্লিতে নানা অঘটন ঘটেছে। কলকাতা যাওয়ার রাস্তা শিগগির বন্ধ হয়ে যাবে। এবার শুরু হল ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের সিপাহী বিদ্রোহ। সিপাহী বিদ্রোহের বিশদ বিবরণ লেখক দিয়েছেন, কিন্তু এই ভ্রমণ সংক্রান্ত আলোচনায় তার প্রয়োজন নেই বলে সেটা উপস্থাপন করা হলো না। বিদ্রোহ চলাকালীন লেখক কাশীতেই থাকেন। কাশীতে বিদ্রোহের তেমন প্রভাব পড়ে নি।
লেখক কাশীর বিভিন্ন তীর্থস্থানে দর্শন, পূজন, তর্পণ করতে থাকেন। ভাদ্রমাসে গঙ্গার জল এত বৃদ্ধি পায় যে গত কুড়ি বছরে সেরূপ হয়নি। কাশীর পুষ্করভাস্কর তীর্থে গঙ্গার জল পৌঁছায়, মণিকর্ণিকা ঘাটের চক্রতীর্থের ইন্দ্রদুমনেশ্বর শিবের মস্তকের ওপর দিয়ে গঙ্গার জল প্রবাহিত হয়ে সেই সব তীর্থের মাহাত্ম্য বেড়ে যায়। ফলে সবাই ওই স্থানগুলোতে পুণ্যস্নান করে। এছাড়া তিনি এই সময় লক্ষ্মীকুণ্ড মেলা, তিলতৃতীয়া ব্রত, গণেশ চৌথ, বরণা যাত্রা ইত্যাদি ধর্মীয় অনুষ্ঠান দর্শন করেন।
৩ আশ্বিন ১২৬৪ সূর্য গ্রহণ হয়। সূর্যগ্রহণকালে নানা দেশের রাজা ও ধনী ব্যক্তিরা এবং সাধারন মানুষরা কাশীর গঙ্গায় স্নান করতে আসতো। কাশীর পাণ্ডাদের এই সময় বিশাল অর্থলাভ হতো। এক একজন রাজা সোনায় মোড়া হাতি, ঘোড়া দান করতেন। কিন্তু এই বছর কোম্পানি সরকারের কাছে খবর এলো যে এই উপলক্ষে ছদ্মবেশে বিদ্রোহীরা কুমার সিংহ (বিহারের ভোজপুরের কুনওয়ার সিং) ও কানপুরের নানা সাহেবের নেতৃত্বে কাশীতে প্রবেশ করবে। তাই সরকারের কর্মকর্তারা স্থানে স্থানে পথ বন্ধ করে বন্দুকসহ প্রস্তুত থাকলো আর সব আসা-যাওয়া, নৌকা পারাপার বন্ধ রাখল। অন্য কোন জায়গার মানুষকে কাশীতে ঢুকতে দিলো না। ফলে পাণ্ডাদের বিশেষ অর্থক্ষতি হলো।
এরপর লেখক কাশীতে শারদীয়া দুর্গাপূজা দেখেন। কাশীর বাঙালিরা দুর্গাবাটিতে (পুরনো দুর্গাবাড়ি, বেনারস) দুর্গোৎসব করেন। নবরাত্রির মেলাও হতো সেখানে নয় দিনব্যাপী। কাশীতে বলিদান নিষিদ্ধ কিন্তু দুর্গাবাড়িতে শুধু বলিদান হতে পারতো।
(চলছে)
এই পর্বে রোজনামচার সময়কাল ১১ পৌষ ১২৬৩ (২৬ ডিসেম্বর ১৮৫৬) থেকে ১৬ আশ্বিন ১২৬৪ (১ অক্টোবর ১৮৫৭)
প্রিয় পাঠক: আপনার মতামত আমার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ! অনুগ্রহ করে একটি মন্তব্য করুন এবং এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার চিন্তাভাবনা শেয়ার করুন। আমি আপনার প্রতিক্রিয়া জানার জন্য আগ্রহী!
সোমবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৪
৩২। তীর্থ ভ্রমণ ১৭ যদুনাথ সর্ব্বাধিকারী
সেকালের বাঙালিদের ভ্রমণ ধারাবাহিক
------- সুমনা দাম
(আগের পর্বের পরে)
দেড় মাস দিল্লি থাকার পর লেখক প্রয়াগের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। পথে বদরপুর গ্রাম পড়ল। সেখানে বুলকট্রেনের বয়েল বদল করা হয়। মানে সেখানে গরুর গাড়ির গরু পাল্টানো হয়। পঞ্চম দিনে বৃন্দাবনে পৌঁছানো হলো। সেখানে দেব দর্শন, পূজা ও বন্ধুদের কাছে শেষবারের মতো বিদায় নিয়ে আবার পথ চলা শুরু। সেকেন্দরাবাগ অর্থাৎ সুলতান সিকান্দার শাহ লোদীর প্রতিষ্ঠিত সিকান্দ্রাবাদ হয়ে তিনদিনে সবাই আগরায় (আগ্রা) পৌঁছালেন।
উত্তর দক্ষিণে আগ্রা শহর দুই ক্রোশ দীর্ঘ ও পূর্ব পশ্চিমে এক ক্রোশ প্রস্থ। এখানে খুব ভালো বাজার আছে। হালওয়াই-এর পট্টি, ভুনাওয়ালাদের পট্টি, গান্ধির দোকান (ফুলেল আতর, গোলাপ জল প্রভৃতি বিক্রির), জরির আর তিল্লার কাজের দোকান, গুড়গুড়ি-আলবোলার দোকান, ভালো গালিচা, সতরঞ্চির দোকান প্রভৃতি অনেক আছে। আগ্রা শহরে প্রায় ৫০০ বাঙালি আছে। অনেক সাহেবও আছে। এখানে নানা রকম কাছারি, ট্রেজারি, ব্যাংক, আদালত আছে।
আগ্রা অতি প্রাচীন শহর। যখন হিন্দুদের রাজ্য ছিল তখন এর নাম ছিল অগ্রবন। মুসলমান রাজ্য হওয়াতে আকবর বাদশাহ এখানে কেল্লা তৈরি করে নাম দেন আকবরাবাদ। পরে মহারাষ্ট্রীয়গন দখল করাতে নাম হয়ে যায় আগ্রা।
আগ্রার কেল্লা যমুনার উপরে অবস্থিত। প্রস্তর নির্মিত মজবুত উঁচু প্রাচীর যুক্ত এই কেল্লার মধ্যে মতি মসজিদ আছে। তার মধ্যে আছে শ্বেত পাথরের তৈরি প্রশস্ত ঘর যেখানে ১৫০০ মানুষ এক সঙ্গে বসে উপাসনা করতে পারে। যেখানে বাদশাহদের কাছারি হতো সেটি দেওয়ান দেওয়ান-ই-আম-খাস। বসার তখ্ত আছে নানা বর্ণের প্রস্তরে খচিত। সিংহাসনের সামনে সোমনাথ মন্দিরের চন্দনের গেট। দেওয়ান-ই-আমের হাওয়াখানায় বাদশাহের কষ্টিপাথরের আরবি লিপি খোদিত তখতের সামনে উজিরের শ্বেত পাথরের তখত। এর দক্ষিণে শিশমহল যেখানে বেগমেরা থাকতেন। শ্বেতপাথরে তৈরি সুবর্ণ খচিত নানা বর্ণের প্রস্তরে চিত্র বিচিত্র। এখানে অতি সৌখিন স্নানাগার আছে। নানা জাতীয় পুষ্পের উদ্যান আছে আছে। আছে সোনার ছাতা লাগানো সম্বল বুরুজ (সামান বুর্জ?)।
আগ্রার কেল্লা থেকে দেড় ক্রোশ দক্ষিণে যমুনার উপরে তাজবিবির রোজা যাতে শাজাহান বাদশাহের ও তাজবিবির কবর আছে। লেখক তাজমহলের কথা বলছেন। মহলটি পুরো মর্মর বা মার্বেল বা শ্বেতপাথরে তৈরি। তার উপর দামী দামী পাথরের ঝাড়, ফুল, ফল, পাতা যার যেমন রং সেই রংয়ের পাথর বসিয়ে খুব ভালো করে পালিশ করে তৈরি। সোনার কাজ অনেক আছে। ভবনটি চার তলা। নীচে দুটি কবর আছে, তার উপর তলায় ওই দুটি কবরের আকৃতি আছে। যে ব্যক্তি এই ভাস্কর্য শিল্প করেছেন তিনি সামান্য মানুষ নন, বিশ্বকর্মার ন্যায় তাঁর বিদ্যাবুদ্ধি। পালিশ এমন সুন্দর যে সাপ উঠতে পারেনা, মশা মাছি বসলে পড়ে যায়। চার তলার ওপর হাওয়াখানা বুরুজ আছে, সেটি থেকে বহু দূরে দেখা যায়। এছাড়া অনেক ঝাঝরি, স্তম্ভ ইত্যাদি আছে। সামনে যে পুষ্পের উদ্যান আছে তার শোভা অপূর্ব। সেই সুগন্ধযুক্ত উদ্যানের চারপাশে পাথরের বাঁধানো পথ। তার দুই ধারে জলের খাল চারপাশকে সুশীতল রাখে। শ্বেতপাথরের বসার সুন্দর জায়গা আছে। বাগানে অসংখ্য রকমের ফুল ও ফলের গাছ আছে। এমন কি সবজির গাছ, পাহাড়ি ফুলের গাছ, মেওয়ার গাছও আছে।
পরবর্তী দর্শনীয় স্থান বর্তমান উত্তরপ্রদেশের বটেশ্বর। এবার তাঁরা পদব্রজে না গিয়ে যমুনায় বজরা করে চললেন। নাগরিয়া, চীনবাস হয়ে এলো বটেশ্বর। এই পথে ডাকাতের উপদ্রব খুব বেশি। বটেশ্বর শিব, চতুর্ভুজ নারায়ণ, গৌরীশংকর মন্দির দর্শন ও পূজা করে, তাঁরা শহর দেখলেন। এটি ভাদরিয়া রাজার রাজ্য (চম্বল নদী উপত্যকার রাজত্ব করা রাজপুত রাজবংশ ভাদরিয়া)। যমুনার ধারে শহর। আগের রাজা ও ধনীরা, যমুনার ঘাট বাঁধিয়ে তার উপর শিব মন্দির স্থাপন করেছিলেন। কিন্তু দেখে মনে হল পূজা তেমন হয় না এখন। চল্লিশ হাজার ঘর, সব জাতির বাস। ধনী ব্যক্তি অনেক আছে । এখানে ২০০ টি শিব মন্দির আছে। শহরে গোঁসাই, সন্ন্যাসী, মোহান্তদের আখড়া আছে। এখানে কার্তিক মাসের পূর্ণিমাতে মেলা হয়। অনেক দেশ থেকে মানুষ এখানে আসে। হাতি, ঘোড়া, উট, গরু, গাধা প্রভৃতি পশু হাজার হাজার বিক্রি হয়। এই মেলা দুই মাস ব্যাপী চলে। জয়পুর, কড়রি, বিকানীর, হাতরাস, ভরতপুর , গোয়ালিয়রের রাজারা এই মেলায় আসেন।
পরদিন জলপথে ভাদোরিয়ার রাজার এলাকা পান্নায় (?) এলেন। এখানে রাজার বাড়ি, কেল্লা আছে। রাজবাড়ীতে লক্ষীনারায়ণ মূর্তি দর্শন করা হলো। সেদিন রাতে যমুনার ঘাটের কাছে থাকার সময় তাঁরা আশ্চর্য এক দৃশ্য দেখলেন। জলের মধ্যে কখনো মানুষের আকৃতি, কখনো গাছের মতো হয়ে, জলের মধ্যে দাঁড়িয়ে উঠে, আবার জল মন্থন করে, জল কল্লোলের মতো শব্দ করে, জল দুই তিন হাত উপরে ওঠে, আবার ডিঙ্গির মতো ভেসে কিছুদূর চলে যায়। তারপর ধোপা যেমন কাপড় কাছে সেরকম শব্দ ও জলোচ্ছ্বাস হতে থাকলো। এরকম অনেক রাত পর্যন্ত চলল। সকালে পরীক্ষা করে কিন্তু যমুনার জলে কিছু দেখতে পাওয়া গেল না (মনে হয় শুশুক বা সেরকম কোনো জলচর প্রাণীরা ঝাঁক বেঁধে এসেছিল)।
এরপর জলপথে ঘাটকো নামক স্থানে ভাদোরিয়া রাজার ভবনে বিহারিজি দর্শন করে ইটওয়া (এটয়া) তে পৌঁছলেন। এটয়া বড় শহর। অনেক বাঙালি বাবু থাকেন। ম্যাজিস্ট্রেট, কালেক্টরের কাছারি, ডাকঘর, ছাউনি সব আছে। এরপর জলপথে আদোনি (আন্দায়া), ভরে (ভরেহ্) হয়ে যমুনা ও চম্বল নদীর সঙ্গমস্থলে পৌঁছলেন তাঁরা। এরপর জলপথে যেতে যেতে উল্লেখ্য স্থান এল অরুয়া, কালপী (কালপি)। কালপিতে শহর দেখা ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনা হল। এখানে কেল্লা, শিব ও নারায়ণের মন্দির, বাঙালি বাবুদের স্থাপিত কালীবাড়ি, সাহেবদের বাংলা ও গোরস্থান দেখা হল। জলপথে পরবর্তী স্থান যেখানে তাঁরা শহর দেখলেন, হল হামিরপুর (হামিরপুর)। এখানে কালেক্টর, ম্যাজিস্ট্রেট-এর কাছারি ডাকঘর, শিবমন্দির আছে। তারপর কোরনি (?), প্রদনগ্রাম (?) হয়ে প্রয়াগ যাত্রা।
যমুনার এই জলপথে ডাকাতের খুব ভয় আছে। বজরার ছাদ থেকে এক ক্রোশ পর্যন্ত দেখা যায়। সেখানে চারজন সিপাহী বন্দুক, তলোয়ার নিয়ে পাহারা দেয়। বারো জন মাঝির যমদূতের মতো স্বাস্থ্য। একটি পাহাড়ি কুকুর আছে, তার সিংহের মতো তেজ। তবু একবার ডাকাতির চেষ্টা হয় লেখকদের বজরায়। লেখক ভাবেন যে কোম্পানি বাহাদুরের রাজ্যে এখনো এত সাহসী দস্যু আছে।
যমুনার স্থানে স্থানে সারস, মানিকজোড়, শামুকখোল, বালিহাঁস, খড়হাঁস, চক্রবাক, বক, চিল, গাংচিল, পানকৌড়ি, সরাল ইত্যাদি নানা জাতীয় শত সহস্র পাখি জলে বিচরণ করে। মকর (অধুনা বিলুপ্তপ্রায় ডুগং বা মেলেটি কি ?), হরেল (ঘড়িয়াল,), কুমির, কচ্ছপ প্রভৃতি জলজন্তুকে চড়ায় শুয়ে থাকতে দেখা যায়। গঙ্গায় যত শুশুক, হাঙ্গর আছে যমুনাতে তত জল জন্তু নেই।
চলার পথে একে একে তাঁরা পার হলেন চিল্লাতারা (চিল্লা ও তারা), লভেটা (?), ডাকাতির জন্য বিখ্যাত চরখা মারখা গ্রাম, কৃষ্ণগড় (?), রাজাপুর (রাজাপুর), প্রতাপপুর (?) এসব হয়ে বজরা এল এলাহাবাদের ঘাটে। শেষের দিকে যমুনার জলের তলায় অনেক ডুবো পাহাড় বা পাথর ছিল। খুব সাবধানে বজরা চালাতে হলো।
দ্বিতীয়বার এলাহাবাদ এসে লেখক আরো বিস্তৃত ভাবে এলাহাবাদের বর্ণনা দিয়েছেন। শহরটি পাঁচ ক্রোশ বিস্তৃত। এখানে পাঁচটি প্রধান বাজার আছে - দারাগঞ্জ, কিটগঞ্জ (কিট সাহেবের বাজার), মুঠিগঞ্জ, কটরা বাজার, বড়বাজার চক। প্রয়াগী পান্ডার বসতি প্রায় ষোলোশ। তারা সবাই ধনবান। রাজারাজড়ারা এই স্থানে এসে এক লক্ষ মুদ্রা পর্যন্ত দান করেন। যুক্তবেনী অর্থাৎ গঙ্গা-যমুনা ও অন্তঃসলিলা সরস্বতীর সঙ্গমস্থল প্রয়াগ। দেবতা আছেন বেণীমাধব, ভরদ্বাজ ও সোমেশ্বর। আকবর বাদশাহের সময় প্রয়াগের নাম এলাহাবাদ হয়েছে (উল্লেখ্য যে ২০১৮ থেকে আবার এলাহাবাদের নাম হয়েছে প্রয়াগরাজ)। বাদশাহ আকবর কাম্যকূপের উপরে যমুনার তীরে ত্রিবেণী সঙ্গমে কেল্লা স্থাপন করেছেন। অক্ষয়বট কেল্লার ভিতরে রয়েছে। এলাহাবাদ কেল্লার মতো সুগঠিত কেল্লা প্রায় দেখা যায় না। এর মধ্যে বাদশাহের শিশমহল, আয়নামহল, লালমহল, দেওয়ান খাস ও সমস্ত কাছারি ছিল। লেখকের দর্শনকালে কোম্পানি অন্যান্য দেশে রাজ্য জয় করে পরাজিত রাজাদের এখানে এনে বন্দী করে রাখতো। কোম্পানির ম্যাগাজিন, তোপখানা, শেলেখানা হয়েছে কেল্লায়। এই শহরে জজ, ম্যাজিস্ট্রেট, কালেক্টর, মুন্সেফ, আবগারি প্রভৃতির কাছারি, সেনা ছাউনি, হাসপাতাল আছে। অনেক বাঙালি এখানে বাস করে। রাস্তাঘাট খুব ভালো। রাস্তার দুই পাশে শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে সাজানো সুন্দর সুন্দর দোকান ও পাকা বাড়ি। শহরে কম বেশি এক লক্ষ হিন্দু ও মুসলিমের বাস।
প্রয়াগের কাম্যকূপে যে যা কামনা করে প্রাণ ত্যাগ করবে তার সেই মনোবাসনা সিদ্ধ হবে ও সেই ব্যক্তি জাতিস্মর হবে বলে প্রবাদ ছিল। এরপর লেখক এক অদ্ভুত গল্প বলেছেন। মুকুন্দ ব্রহ্মচারী নামক এক সাধক সোমেশ্বর শিবের তপস্যায় দেবাদেশ পান যে তাঁকে পুণর্জন্ম নিয়ে ঐশ্বর্য ভোগ করতে হবে এবং তাঁর শিষ্য বীরভদ্রেরও একই পরিণাম হবে। শিষ্য গুরুকে না ছেঁকে দুগ্ধ দিতেন পানের জন্য। যোগবলে তা জানতে পারেন গুরু। সেই কাজ যবন তুল্য ছিল। তাই তিনি বুঝতে পারেন পুণর্জন্মকালে তাঁকে যবন রূপে অর্থাৎ বিধর্মী হিসাবে জন্ম নিতে হবে। গুরুশিষ্য তখন কাম্যকূপে প্রাণত্যাগ করে নিজ নিজ কামনা অনুসারে আকবর ও বীরবল রূপে জন্মগ্রহণ করলেন। তাঁদের পূর্বজন্মের স্মৃতি স্মরণ হলো। তখন আকবর ও বীরবল পূর্বের তপস্যাক্ষেত্র প্রয়াগে এলেন এবং বিবেচনা করলেন এরূপ কূপ কলিযুগে রাখা উচিত নয় যেখানে প্রাণ ত্যাগ করলে যে কোন মানুষ যেকোনো রূপ ধারণ করে জন্ম নিতে পারবে। তাই সিসা গলিয়ে কূপ বন্ধ করিয়ে তার ওপর কেল্লা তৈরি করালেন। অক্ষয় বট কিন্তু রৌদ্র বাতাস বৃষ্টি না পেয়েও কেল্লার মধ্যে জীবিত থেকে গেল। সেই ব্রহ্মচারীর তপোবন কেল্লার অপর পারে আরইন গ্রামে সোমেশ্বর শিবমন্দিরের কাছে ছিল লেখক বলেছেন। এই গ্রামের দক্ষিণে ঝুশীগ্রাম, সেখানে গৌতম মুনির আশ্রম ছিল।
প্রয়াগে মাঘ মাসে মাঘমেলা হয়। নানা দেশ থেকে মানুষ, রাজা, সাধুসন্ত, আখড়াধারী গোঁসাইরা আসেন। নানাদেশ থেকে মহাজন ও দোকানদারেরা এসে ক্রয়-বিক্রয়ের দোকান করে। ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব পদাতিকদের নিয়ে নিজে সর্বদা তদারক করেন মেলার। যেসব জমিতে যাত্রীরা থাকার অস্থায়ী ঘর করে ও দোকানদারেরা অস্থায়ী দোকান তৈরি করে তার উপর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি চড়া হারে কর ধার্য করে।
(চলছে)
এই পর্বে রোজনামচার সময়কাল ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১২৬৩ (২৭ মে ১৮৫৬) থেকে ১০ পৌষ ১২৬৩ (২৫ ডিসেম্বর ১৮৫৬)
প্রিয় পাঠক: আপনার মতামত আমার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ! অনুগ্রহ করে একটি মন্তব্য করুন এবং এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার চিন্তাভাবনা শেয়ার করুন। আমি আপনার প্রতিক্রিয়া জানার জন্য আগ্রহী!
শনিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৪
৩১। তীর্থ ভ্রমণ ১৬ যদুনাথ সর্ব্বাধিকারী
সেকালের বাঙালিদের ভ্রমণ ধারাবাহিক
------- সুমনা দাম
(আগের পর্বের পরে)
এবার শুরু হল লেখক যদুনাথ সর্ব্বাধিকারীর দ্বিতীয় বার এবং আরো বিশদভাবে দিল্লি দর্শন। সেই সময় দিল্লির সিংহাসনে রয়েছেন শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর। তবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে তাঁর ক্ষমতা শুধু দিল্লির কেল্লার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আর তাঁর বাদশা উপাধি নামমাত্রই হয়ে উঠেছিল। লেখকের বর্ণনায় ইন্দ্রপ্রস্থ বা দিল্লী শহরের আকৃতি ডিমের মতো। এই শহরে প্রকাশিত দ্বার বারটি আর গোপন দ্বার পাঁচটি। প্রকাশিত দ্বারকে দরওয়াজা বলে আর গোপন দ্বার কে খিড়কি বলে। প্রধান দ্বার হল দিল্লি, আজমিরি, কাশ্মিরি, কলিকাতা দরজা প্রভৃতি। এইসব দরজায় অস্ত্রধারী দ্বারপাল ও পদাতিক সৈন্য ছিল। গোপন দরজা যেমন বাহাদুর আলী খান খিড়কি, নিগমবোধ খিড়কি, খাজানা খিড়কি প্রভৃতি। দিল্লি শহর পাঁচ ক্রোশ বিস্তৃত। শহরের স্থানে স্থানে নানা দ্রব্যের ক্রয় বিক্রয়ের সওদাগর, সব দেশের মানুষজন, রাজপুরুষ ও বেশ্যারা থাকে। লাহোর থেকে দিল্লি পর্যন্ত রয়েছে প্রশস্ত রাজপথ। শহরের মধ্যে দিয়ে যমুনা বয়ে যাচ্ছে, মাঝে মাঝে সেতু আছে তাই দিয়ে লোক চলাচল করে। হীরা, জহরত, চুনি, পান্না, কালাবর্ত অর্থাৎ সোনা রুপার তারের খচিত বস্ত্রের ব্যবহার এখানকার ধনীরা খুব করেন। মাঝে মাঝে এরকম স্থানও আছে যেখানে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা অল্প আয়ে জীবন যাপন করে। প্রধান পথের দুই পাশে দোকানগুলি নানা দ্রব্য দিয়ে শোভিত। মাঝেমাঝে কাঠের স্তম্ভে কাচের দীপাধার আছে, রাতে এখানে দীপ জ্বলে নগর উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। শহরের মধ্যস্থলে জুম্মা মসজিদে অপরাহ্নে মৌলবী, মুন্সি, ফকিররা একসাথে সাধন ভজন করে। ওইখানে চকের মত উত্তম দ্রব্য বিক্রয় হয়। দিল্লির নতুন কেল্লার (লাল কেল্লা) তিনটি দরজা। দিল্লির দ্বারের কাছে লালদীঘি নামে পুষ্করণী আছে যা যমুনার জলে পূর্ণ। তাতে মাছ আছে।
রাজধানীর ব্যক্তিগণ সুসভ্য, সুবেশ, সুআবাস, সুভাষ, সচ্চরিত্র ও স্বধর্মে সুপবিত্র। অপরাহ্ণে সবাই ঘোড়া, হাতি, উট, বিমান(?), রথ, মানুষের টানা গাড়ি, গরুর গাড়ি, মৃগযান(?), চেরেট (চ্যারিয়ট), বগী(?), পালকি, সেজগাড়ি, তানজাম, মেছনি(?), বোচা(?), মহাপা(?)-তে বস্ত্র অলংকারে সুসজ্জিত হয়ে ভ্রমণ করে। যাদের এসব নেই তারাও ভালো বস্ত্র পরে, সুগন্ধি ফুলের মালা বা আতরে মন প্রফুল্ল রাখে। নর্তকী ও বেশ্যারা আপন আপন নায়কের সঙ্গে ভ্রমণ করে।
দিল্লিদ্বার দক্ষিণ দিকে, লাহোরদ্বার পশ্চিম দিকে। কলকাতা দরজা পূর্বে ছিল না। গভর্নর জেনারেলের আদেশে কলকাতা দরজা হয়েছে। কাশ্মীর দরজার দুই মাইল পরে সেনা ছাউনি। দিল্লির কলেজে ইংরেজি, পার্সি, আরবি, উর্দু ও দেবনাগর এই পাঁচ ভাষায় পড়ানো হয়। লেখক এরপর দিল্লির ৩৩ টি বাজারের নাম জানিয়েছেন। এছাড়াও দিল্লিতে গলিতে গলিতে আরো বাজার আছে। নিগমবোধ খিরড়ির কাছে অনেক হিন্দু দেবালয় আছে।
বাদশাহী তক্ত অর্থাৎ পূর্বের রাজসিংহাসন বহু মহামূল্য পাথরের লতাপাতা, পুষ্প খোদিত ছিল, সেসব খুলে লুট করে নিয়ে গেছে (নাদির শাহ নাকি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, কার কথা বলছেন লেখক?)। দেওয়ান ই আমে বাদশাহ আগে বসতেন। ২২ টি থামে ২২ জন সুবা দাঁড়াতেন। সামনে ফুলের বাগান আছে। তারপরে মহাতাব বাগ, আরাম গৃহ, আঁধিয়ারি বাগ আছে। আঁধিয়ারিবাগে অনেক জাতের মেওয়া, ঔষধি গাছপালা আছে। যমুনার জল থেকে ফোয়ারা তৈরি করে রাখা আছে। মাঝে মাঝে আছে চৌবাচ্চায় পদ্ম ফুলের শোভা। একটি ঘর আছে যেখানে শতধারায় ফোয়ারা বসিয়ে জল ছাড়া হতো আর শ্রাবণভাদ্রের মতো বৃষ্টি হতো। নৌকা ভ্রমণের জন্য ব্যবস্থা ছিল বাদশাদের। এরপর মতি মসজিদ বা বাদশাহের ভজনের স্থান। আগে বহু মূল্য পাথরে খচিত ছিল। এখন শুধু শ্বেতপাথর আছে। যে কক্ষে বাদশাহ রাজকার্যে বসেন, দেওয়ানী খাস, তার শোভা অতুলনীয়। দৈর্ঘ্য প্রস্থে বিরাট ঘর। কিন্তু কড়ি বর্গা নেই, পাথরের চাদরের খিলান। তাতে নানা রঙের প্রস্তর খচিত ও চিত্রবিচিত্র আছে। ঘরের মধ্যস্থলে শ্বেত পাথরের রাজসিংহাসন এক হাত উঁচু বেদির ওপর বসানো। ওই তখত ঘরের মধ্যে বন্ধ করা থাকে। যখন বাদশাহ বসেন তার আগে সুসজ্জিত করে বের করা হয়। ওই তখতের চারপাশে মছলন্দের (কারুকার্য করা নরম বসার আসন) বিছানায় বসে রাজপুরুষরা আপন আপন কাজ করতেন। ওই ভবনের উত্তর দ্বারে স্ফটিকের এক চৌকি আছে সেখানে বসে যমুনা দেখা ও শীতল বায়ু সেবন করতেন বাদশাহ।
ভবনের চারদিকে সরদারদের দপ্তর আর খোজা রক্ষক আছে। আরও ভিতরে বাদশাহজাদাদের মহল্লা বা বাদশাহী অন্তঃপুর। বাদশাহের কুড়িজন বিবাহিতা ও বাকি অবিবাহিতা নিয়ে ২০০ বেগম। বাদশার বয়স তখন আশির বেশি, সর্বদা বাইরে আসেন না। অন্তঃপুরে এক মসজিদ আছে, সেখানে স্ত্রীলোকেরা ভজনা করে। দিল্লিশ্বরের ঘুড়ি আর শিকার খেলা খুব প্রিয়। দিল্লিশ্বরের মধ্যমপুত্র মির্জা খুব গুণী ও গান বাজনায় সুপন্ডিত। তিনি খুব সুপুরুষ। ঘোড়া ও কুকুর তাঁর খুব প্রিয়। তিনি গান বাজনা আর ভ্রমণ নিয়ে থাকেন। লাল পর্দা বলে একটি অন্তঃপুর আছে। সেখানে কোনো পুরুষ, খোজা, এমনকি ৫ বছরের বালকেরও প্রবেশাধিকার নেই। সেখানে নারী দোকানীর কাছে বেগমেরা হীরা মোতি ক্রয় করেন। কৌড়িয়া পুলের কাছে বেগমবাগ নামে এক বাগান আছে। অতি সুরম্য, সুশীতল স্থান। পাঞ্জাবি কাটরাতে পাঞ্জাবি সওদাগরদের বাস। এরা দীর্ঘকাল দিল্লিবাসী ও বাণিজ্য কর্ম করে ধনী হয়েছে। সব বাজারে জরি, পাল্লা, কালাবর্ত ও টুপির দোকান আছে। কুর্তা , আঙ্গিয়া, লেহেঙ্গা, দোপাট্টা বহু মূল্য ও উত্তম মানের পাওয়া যায়।
নিগমবোধ ঘাটে প্রতি রবিবার গায়কদের মজলিস হয়। শহরের সব গায়ক সেখানে উপস্থিত হন। কাশ্মীর দরজার কাছে এক সাহেবের বাড়িতে এক জন্তু আছে, তার আকার উটের মতো, গলা লম্বা, মুখ ঘোড়ার মত, পেছনের পা ছোট, গায়ে বাঘের মতো ফোটা ফোটা দাগ, বয়স দুই বছর মাত্র কিন্তু বড় উটের মত লম্বা। যে জন্তুকে লেখক দেখেছেন তা জিরাফ অর্থাৎ এক ইংরেজ সাহেব দিল্লিতে নিজের বাড়িতে জিরাফ পুষেছিলেন। যমুনার নিগমবোধের ঘাটে তিনি নৃসিংহ চতুর্দশীর মেলা দেখেছিলেন। মেলায় প্রহ্লাদ চরিত্র পাঠ হয়। হিরণ্যপসিপুর এক কাগজের স্বরূপ (মডেল) বানিয়ে সন্ধ্যার সময় দৈত্য বিনাশ করা হয়। লেখক রাজা হিন্দুরায়ের এস্টেট নিলাম প্রত্যক্ষ করেছিলেন। তাঁর শিকারের উত্তম উত্তম যন্ত্র ছিল। একটি বন্দুকের দাম ৭০০ টাকার কম না। একটি ঢাল ২,০০০ টাকায় বিক্রি হয়। গ্রাহক না থাকায় হিরা-চুনি-পান্না-মোতির কাজ করা দ্রব্যাদি বিক্রি হলো না।
দিল্লি দরজা থেকে দুই ক্রোশ দূরে পুরনো দিল্লি। সেখানে বাদশাহের পুরনো কেল্লা। অন্য রাজাদের আপন আপন পুরনো কেল্লা, আরবের সরাই (পূর্বে আরব দেশে সওদাগরেরা এসে সেখানে থাকতো)। এর পর এল ভুলভুলড়ি মসজিদ। এই মসজিদে বহু মূল্যবান পাথর ছিল তা ইংরেজ বাহাদুর উঠিয়ে নিয়ে গেছে। (এটি বর্তমান জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া কেন্দ্রীয় মসজিদ)। এই মসজিদ থেকে দু ক্রোশ পথ পেরিয়ে পাহাড়ের উপর বাহাপুরের কালকাদেবীর মন্দির। দেবীর স্বরূপ গোলাকার পাথর আছে যা পুষ্প বস্ত্র অলংকারে আবৃত। মন্দিরের ধর্মশালায় পথিকেরা থাকতে পারে। নবরাত্রিতে এখানে বড় মেলা হয়।
এবার লেখক পৃথ্বীরাজ চৌহানের বিষয়ে বলেন কিন্তু তিনি তাঁকে পৃথুরাজা নামে বিবৃত করেছেন। পৃথুরাজার রাজধানী গড়ের মধ্যে চতুর্দিক বেষ্টিত আছে। তিনি যোগমায়া দেবীর উপাসক, তাঁর মূর্তি কেল্লার মধ্যে আছে (ছিল?)। কেল্লার মধ্যে যজ্ঞস্থান আছে। সেখানে মুনিগন এক রাজসিক যজ্ঞ করেন। এক স্তম্ভ (কুতুব মিনারের পাশে লৌহ মিনার) মুনিরা যজ্ঞ কুন্ডের মধ্যে স্থাপিত করে বলেন যে এই স্তম্ভের মধ্যস্থল নাগরাজের মাথার ওপর স্থাপিত হল। যতদিন স্তম্ভ থাকবে ততদিন তাঁর রাজ্য থাকবে। এই কথায় রাজার মনে সন্দেহ হওয়াতে তিনি ওই স্তম্ভ হেলানোর চেষ্টা করেন। ওই স্তম্ভের তলায় থেকে রক্তপাত হল। রাজার মনে সন্দেহ আসাতে মুনি দুঃখিত হন ও বলেন যে স্তম্ভ স্থাপনের উদ্দেশ্য সফল হবে না আর স্তম্ভটি সব সময় ঈষৎ দক্ষিণ-পশ্চিমে হেলে থাকবে। স্তম্ভের উপর দেবনাগরীতে এসব লেখা আছে। মুসলমান ও ইংরাজ রাজত্বে তারা ওই স্তম্ভ ওঠানোর জন্য অনেক খনন করেছে কিন্তু শেষ সীমা পায়নি। কামানের গোলা ছুড়েও স্তম্ভকে ফেলতে বা ভাঙতে পারেনি। স্তম্ভের গায়ে পার্সী অক্ষরে এসব লেখা আছে আর গোলার দাগও আছে। ওই স্তম্ভের কিছু দূরে একটি বৃহৎ ও উচ্চ স্তম্ভাকৃতি ছয় তলা উঁচু ঘর আছে, যাকে লাট বলে (কুতুবমিনার), যার ওপর বসে নাকি রাজকন্যা নয় ক্রোশ দূরে যমুনা দর্শন ও পূজা করবেন বলে রাজা এটি নির্মাণ করেছিলেন। এই স্তম্ভের আকারে পরে কলকাতার মনুমেন্ট তৈরি করা হয়েছিল বলে লেখক বলেন। রাজার বাড়ি প্রস্তর নির্মিত ও উত্তম প্রস্তর দ্বারা খচিত ছিল এই স্তম্ভ গুলো বাড়ির ভিতরে ছিল। মুসলমানদের রাজ্য হওয়াতে ওই রাজবাড়িতে আর যজ্ঞভূমিতে যেসব দেবদেবীর মন্দির ও যজ্ঞকুন্ড ছিল সব ভেঙে ভালো ভালো যেসব পাথরের দরজা ছিল তা উঠিয়ে দিল্লিতে নিয়ে যায়। দেবালয়ের স্থানে মসজিদ তৈরি হয় এবং স্থানে স্থানে কবর দেওয়া হয়। এভাবে হিন্দুদের সব ধর্ম বিষয়ক স্থান ছিল সব ভেঙে ফেলা হয়। ধাতু ও পাথরের স্তম্ভ ভাঙ্গতে পারেনি, আজ পর্যন্ত বজায় আছে।
লেখক এবার যান দিল্লি বা ইন্দ্রপ্রস্থ থেকে গড় মুক্তেশ্বরে (গড়মুক্তেশ্বর, উত্তর প্রদেশ) যেখানে পাণ্ডবদের স্থাপিত মুক্তেশ্বর শিব আছে। সেখান থেকে ত্রিশ ক্রোশ দূরে হস্তিনাপুরি (হস্তিনাপুর, উত্তর প্রদেশ), যা কুরুকুলের আদি রাজ্য এখন নিবিড় জঙ্গলে পরিণত হয়ে আছে। সেখানে সন্ন্যাসীরা আছেন। কুরুকুলের ঘরবাড়ি বর্তমানে নেই, শুধু স্থানে স্থানে চিহ্ন আছে।
(চলছে)
এই পর্বে রোজনামচার সময়কাল ১৬ বৈশাখ ১২৬৩ (২৯ এপ্রিল ১৮৫৬) থেকে ১২ জ্যৈষ্ঠ ১২৬৩ (২৬ মে ১৮৫৬)
প্রিয় পাঠক: আপনার মতামত আমার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ! অনুগ্রহ করে একটি মন্তব্য করুন এবং এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার চিন্তাভাবনা শেয়ার করুন। আমি আপনার প্রতিক্রিয়া জানার জন্য আগ্রহী!
শুক্রবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৪
৩০। তীর্থ ভ্রমণ ১৫ যদুনাথ সর্ব্বাধিকারী
সেকালের বাঙালিদের ভ্রমণ ধারাবাহিক
------- সুমনা দাম
(আগের পর্বের পরে)
মণিকরণ কুলুর রাজা জগৎসিংহের প্রতিষ্ঠিত দেবালয়। মণিকরণে দুটি কুণ্ড আছে। নীচে যে কুন্ড আছে তাতে দুই হাত মতো জল আছে, জলে সামান্য স্রোত আছে। উপরে যে কুণ্ড আছে তাতে এক হাত জল। দুটি কুন্ডেই জল খুব উষ্ণ। স্পর্শ মাত্র হাত পুড়ে যাবে। সর্বদা ধোঁয়া উঠে অন্ধকার হয়ে আছে। কুন্ডের মধ্যে রান্নার কাঁচা দ্রব্য দিলে তা সুসিদ্ধ হয়ে যায়। এই কুন্ডের মধ্যে ভাত, খিচুড়ি, পায়েস, রুটি, ডাল প্রভৃতি রান্না করে অনেকে খায়।
এই স্থান পূর্বে হরপার্বতিসহ বিভিন্ন দেবদেবীর বিহারের স্থান ছিল। বিহারকালে পার্বতীর কানের কুণ্ডল সহ মণি এখানে পড়ে যায়। শিব তখন ডাকিনী যোগিনীদের সেই মনি উদ্ধারে পাঠান। এক যোগিনী পাতালপুরীতে গিয়ে দেখেন নাগরাজের মাথায় রয়েছে সেই মণি। নাগরাজ তাকে দেখে রাগান্বিত হয়ে বলেন যে তিনি ধ্যান করছেন এই সময় স্ত্রীজাতির আগমন নিষিদ্ধ তাহলে এই যোগিনী কেন এখানে এসেছে। যোগীনির মুখে তারপর সব কথা শুনে নাগরাজ মণি নাসার অগ্রভাগে রেখে এক ফুৎকারে সেই মণি উপরে পাঠান। সেই ফুৎকারের পথে দুই উত্তপ্ত ধারা উঠে এসেছে আর এই স্থানের নাম হয়েছে মণিকরণ।
এর পূর্ব সীমানায় ব্রহ্মনালে ব্রহ্মা তপস্যা করেছিলেন। ব্রহ্মনাল দর্শন করে উপরে উঠে ঈশান দিকে তাকালে কৈলাস পর্বত ধবলগিরি দেখা যায়। ওই পর্বতে চূড়ায় এক সুন্দর মন্দির আছে। ব্রহ্মনাল থেকে উপরে ১২ ক্রোশ গিয়ে মানতালাব বা মানসরোবর। বরফ সর্বদা পড়ে পথ অতি দুর্গম। এত সুন্দর মন্দির সেখানে আছে যা মনে হয় মানুষের তৈরি নয়। এখানে লেখক কৈলাস মানস সরোবরের কথা বলেছেন কিন্তু এখান থেকে কৈলাস বা মানসরোবর কোনটিই দেখা সম্ভব নয়। এই স্থান থেকে হরিন্দর পর্বত দেখা সম্ভব। এখানে লেখকের তথ্যে কোন ভুল হয়েছে।
মণিকরণে তীর্থস্থান হল ব্রহ্মনাল, ত্রিধারা, লক্ষ্মীকুন্ড, রামচন্দ্রজির মন্দির, রামকুন্ড। এই তীর্থে কুলু রাজার লক্ষ্মীনারায়ণ, রঘুনাথজি, নৃসিংহ, রামচন্দ্রজি ও মুরলিধর এই পাঁচটি দেবালয় আছে। ফেরার পথে দর্শন করা হলো বিজলীশ্বর মহাদেব। এই বিজলীশ্বর লিঙ্গ নাকি প্রতি বারো বছর অন্তর বজ্রাঘাতে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। তারপর সেই টুকরো জুড়ে আবার নতুন লিঙ্গ তৈরি করা হয়।
বামনকোঠি থেকে চার ক্রোশ দূরে ব্যাসা নদী কাঠের পুলে পার হয়ে রাজা জ্ঞানসিংহের রাজধানী কুলু শহরে এলেন তাঁরা। পাহাড়ের মধ্যে সুন্দর শহর, সব রকম জিনিস পাওয়া যায়। হিন্দু-মুসলমান সব জাতির বসবাস। কোম্পানির তহসিলদার ও পুলিশের কাছারি আছে কেল্লার মধ্যে। রাজবাড়ি আছে। রামসীতা ও নৃসিংহদেবের মন্দির আছে। এখানে পরশুরামের এক মন্দির আছে যার দুয়ার ১২ বছর অন্তর শ্রাবণ মাসে খোলা হয়।
এবার কুলু থেকে বেজওর ,(বাজৌরা), কুমান্দ, জরু প্রভৃতি হিমাচল প্রদেশের বিভিন্ন স্থান দিয়ে পথ চলা। এখানে জলের খুব অভাব। ছয় ক্রোশ পার্বত্য পথ চলেছেন সম্পূর্ণ জল ছাড়া। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে রসদ সংগ্রহ হয় তো কাঠ পাওয়া যায় না। কাঠ জোগাড় হয় তো ঝড়, শিলাবৃষ্টিতে সামান্য আশ্রয়ের পাথরের ছাদের ফাটল দিয়ে গলে গায়ে জল, শিলা পড়ে। এভাবে অতি কষ্টে তিনি সঙ্গীদের নিয়ে চলতে থাকলেন। ফুটাখ, হীরাবাগ, ভাঙাহাল এই সব হিমাচল প্রদেশের গ্রাম হয়ে এলেন বৈদ্যনাথ বা বৈজনাথ। সেখানে পর্বতের উপরে শিব মন্দির, নীচে ক্ষীরগঙ্গা। মন্দির থেকে ক্ষীর গঙ্গা ১৫০ সিঁড়ির নীচে। বৈজনাথে আছেন বৈদ্যনাথ, সিদ্ধিনাথ, কেদারনাথ, ইন্দ্রেশ্বর, গণপতেশ্বর, কাশীর বিশ্বেশ্বর, রাবণেশ্বর, ভূতেশ্বর ও মহাকাল - এই নয় অনাদি শিব। এখানে নানা রকম দোকান বাজার আছে।
বৈজনাথ থেকে ব্যাবারন্যা (ভাওরনা) গ্রাম, পরওল (পরৌর), ধরমসা (ধরমশালা) হয়ে ভাগশু আসা হল। এখানে পাহাড়ের উপর ভাগশু শিব আছেন। ভাগশুতে কোম্পানির ছাউনি, কাছারি ইত্যাদি হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীর থেকে আগত হয়ে কাংড়া কেল্লায় যাওয়া যায় এই পথে, তাই কোম্পানি এখানে খুব সজাগ পাহারা রাখে। এখানে রাজপুরুষদের আগমনে বরফ আচ্ছাদিত হলেও ভালো শহর গড়ে উঠেছে।
এবার কাংড়া যাওয়ার পথে আশ্চর্য সাধুকে দেখলেন সর্ব্বাধিকারী মহাশয়। তাঁর নাম মস্তরাম বাবা, বয়স ১০০ বছরের বেশি। কিন্তু তাকে দেখে পঞ্চাশ বছরের বেশি মনে হয় না, এমন সবল। কুষ্ঠ রোগী, মৃগী রোগী স্পর্শ মাত্র সুস্থ করতে পারেন। এরপর এলো নগরোট (নগরোটা ভগবান)। তার চার ক্রোশ দূরে কাংড়ার দেবীর ভবন। দেবীর নাম ব্রজেশ্বরী। এখানে সতীর স্তন পতিত হয়েছিল। পূর্বে যে প্রাচীন মন্দির ছিল তার উপর পাঞ্জাবের মহারাজা রঞ্জিত সিংহ কাংড়া অধিকার করার পরে নতুন মন্দির তৈরি করে দিয়েছেন। প্রস্তর নির্মিত স্বর্ণমণ্ডিত এই মন্দিরে রুপার সিংহাসনে, রুপার পত্রে দেবীর প্রতিমূর্তি গঠিত করে দিয়েছেন। আসল মূর্তি গোলাকার পাথরের, তা পুষ্প চন্দন বস্ত্র দ্বারা শোভিত। দেবীর মন্দিরের পান্ডাদের দেবীরূপা কন্যারা যাত্রীদের থেকে অর্থ সংগ্রহ করে সরল মনে। মহাদেবের মন্দির থেকে দুই ক্রোশ চড়াইয়ে কাংড়া রাজার কেল্লা। কেল্লার মধ্যে অম্বিকাদেবী ও কালভৈরব রক্ষক। কেল্লার পশ্চিমে পাতালগঙ্গা ও তারপর জয়ন্তী পর্বত। পর্বতের মাথায় জয়ন্তী দেবী ও তালেশ্বর শিবের মন্দির। এই স্থানকে কপাল পীঠ বলে। কাংড়া শহরের শ্রীহ্রাস হয়েছে কারণ ভাগশুতে কোম্পানীর সব দপ্তর, বাজার চলে গেছে। কেল্লায় এখন কিছু ইংরাজ সৈন্য আছে। রাজা সংসারচন্দ্র সপরিবারে ইংরেজের সঙ্গে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে নেনডোর পাহাড়ে বন্দী আছেন। কেল্লা থেকে এক ক্রোশ দূরে বাণগঙ্গা ও পাতাল গঙ্গার সঙ্গমস্থল। সেখানে ৩৬০ টি তীর্থস্থান আছে।
কাংড়া থেকে গণেশঘাঁটীর পাহাড়ের সুড়ঙ্গ পথ দিয়ে যাওয়া হলো। কোম্পানি বারুদের দ্বারা পর্বত উড়িয়ে (ডিনামাইট দিয়ে) সুরঙ্গ তৈরি করেছে। এভাবে রাণীতলাব, রামপুরা হয়ে জ্বালামুখীতে আবার আসা হলো। আবার দর্শন, পূজন করে ডেরাগ্রাম (ডহরা গোপীপুর) হয়ে চিন্তাপূর্ণী দেবীর (চিন্তাপূর্ণী মন্দির, হিমাচল প্রদেশ) দর্শনের উদ্দেশ্যে যাওয়া হল। এটি ভগবতী ছিন্নমস্তা দেবীর মন্দির। সেখান থেকে হুশিয়ারপুর (হোসিয়ারপুর) হয়ে গেলেন রাজেশ্বরী মন্দির।
সেখান থেকে জেজো, সন্তকগড়, বরমপুর, কোটগ্রাম হয়ে পার্বত্য পথে লেখকেরা পৌঁছলে নয়না দেবী মন্দিরে (হিমাচল প্রদেশের)। নবরাত্রীর মেলায় এখানে অনেক মানুষ একত্র হয়। পান্ডাদের ঘর থেকে ৪০৬ ধাপ সিঁড়ি উঠে নয়না দেবীর মন্দির। সেখানে ধর্মশালা আছে। প্রথমে দেবীর পদচিহ্ন ও দুটি বাঘের মূর্তি দেখা যায়। তারপর দেবীর মন্দির। এ ছাড়া শিবকালী, লক্ষ্মীনারায়ণ, বটুক ভৈরবের মূর্তি আছে। এখানে সতীর নয়ন পড়েছিল তাই নয়নাদেবী বলে। দেবী অষ্টভুজা, সামনে বাঘের মূর্তি আছে। ওই ভবনের আধ ক্রোশ নীচে একটি সুড়ঙ্গে বটুক ভৈরব গুপ্তভাবে আছেন। ওই সুড়ঙ্গ পথে পূজা দিতে হয়। এখানে পান্ডাদের কন্যারা যাত্রীদের থেকে অর্থ ভিক্ষা করে দেবীরূপা হয়ে। তাছাড়া পান্ডাদের বালকেরাও অর্থ চায়।
কোটগ্রাম (কোট), বরমপুর হয়ে সন্তোকগড় এল। এটি রাজা রামসিংহ জায়গীরদারের কেল্লা। এরপর জেজো, মানপুর হয়ে হিমাচল প্রদেশের হুশিয়ারপুর এলো। এখানে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছারি, সেনা ছাউনি, ডাকঘর, গির্জা, সাহেবদের বাংলো আছে। এখানে গুরু নানকের মেলা হয়।
লেখক এবার হরেনা (হরিয়ানা, পাঞ্জাব), ফাগুড়া (ফাগওয়াড়া, পাঞ্জাব) হয়ে সতলেজ (শতদ্রু) নদীতে নৌকার পুল পার করে লুধিয়ানা পৌঁছলেন। সেখানে জজ, ম্যাজিস্ট্রেট, কালেক্টরদের কাছারি আছে। এবার তিনি যান অম্বালা (আম্বালা)। এটি একটি বড় শহর, বিরাট সেনা ছাউনি আছে। অনেক রকম দোকান বাজার আছে আর অনেক বাঙালি আছে। সেখান থেকে হরিয়ানার সাহাবাদ, পিপলি, কর্ণাল, পানিপথ, সামহান হয়ে দিল্লির কাবুলি দরজাতে এসে পৌঁছালেন।
( চলছে )
এই পর্বে রোজনামচার সময়কাল ৫ চৈত্র ১২৬২ (১৯ মার্চ ১৮৫৬) থেকে ১৫ বৈশাখ ১২৬৩ (২৮ এপ্রিল ১৮৫৬)
প্রিয় পাঠক: আপনার মতামত আমার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ! অনুগ্রহ করে একটি মন্তব্য করুন এবং এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার চিন্তাভাবনা শেয়ার করুন। আমি আপনার প্রতিক্রিয়া জানার জন্য আগ্রহী!
বুধবার, ২১ আগস্ট, ২০২৪
২৯। তীর্থ ভ্রমণ ১৪ যদুনাথ সর্ব্বাধিকারী
সেকালের বাঙালিদের ভ্রমণ ধারাবাহিক
------- সুমনা দাম
২। গোড়ার কথা
সেকালের বাঙালিদের ভ্রমণ ধারাবাহিক ---- সুমনা দাম বাঙালির ভ্রমণ-প্রীতি সর্বজনবিদিত। কিন্তু ঠিক কখন থেকে বাঙাল...
-
সেকালের বাঙালিদের ভ্রমণ ধারাবাহিক ------- সুমনা দাম স্বর্ণকুমারী দেবী ( ১৮৫৫-১৯৩২ ) অন্যতম প্রথম বাঙা...
-
সেকালের বাঙালিদের ভ্রমণ ধারাবাহিক ------- সুমনা দাম (আগের পর্বের পরে) আগস্...
-
সেকালের বাঙালিদের ভ্রমণ ধারাবাহিক ------- সুমনা দাম "আ ভিজিট টু ইউরোপ" ত্রৈলোক্যনাথ মুখ...