সেকালের বাঙালিদের ভ্রমণ ধারাবাহিক
------- সুমনা দাম
এই পর্বে সংশ্লিষ্ট দেশ - শ্রীলঙ্কা, ইয়েমেন, মালটা, ইংল্যান্ড ।
Romesh Chunder Dutt এর "Three years in Europe 1868-1871 with an account of subsequent visit to Europe in 1886 and 1893" বই-এর প্রথম সংস্করণ ১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দে S. K. Lahiri and Co. থেকে প্রকাশিত হয়। এই বইটির একটি বাংলা অনুবাদও আছে। "ইউরোপে তিন বছর" - রমেশ চন্দ্র দত্ত। কিন্তু দুটি বই একেবারে হুবহু এক নয় সেই কারণে এখানে এই ব্লগে মূলত ইংরেজি বইটিকে অনুসরণ করে লেখা হলো। ইংরেজি বইটির দ্বিতীয় সংস্করণটিতে (১৮৯০ -এ প্রকাশিত) কিছু পরিমার্জন ছাড়াও এটিতে লেখকের ১৮৭২ -এর পরবর্তী সময়ের (১৮৮৬ -র ভ্রমণকাহিনী) ভ্রমণের কথা যুক্ত হয়েছে। ১৮৯৬ -এ প্রকাশিত তৃতীয় সংস্করণে তাঁর ১৮৯৩ -এর রাইনল্যান্ড ভ্রমণের কাহিনী যুক্ত হয়েছে। তাই ইংরেজি বইটির তৃতীয় সংস্করণের অনুসরণে ব্লগটি লিখিত হল।
রমেশ চন্দ্র দত্ত (১৮৪৮-১৯০৯) একজন ভারতীয় সিভিল সার্ভিস অফিসার, ঐতিহাসিক, সাহিত্যিক এবং অনুবাদক। চাকরি থেকে অবসরের পরে তিনি ইউনিভার্সিটির কলেজ, লন্ডনে অধ্যাপনা করেছেন; ইকোনমিক ন্যাশনালিজমের উপর গবেষণা করেছেন ও বরদা রাজ্যে দেওয়ান হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের প্রথম সভাপতি ছিলেন, যখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন (১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে) সহ-সভাপতি। তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে।
এই বইটি ইউরোপীয় আচার ব্যবহার সম্বন্ধে ও নানা দেশের বর্ণনা বিষয়ে কতগুলি পত্রের সারাংশ, যেগুলি লেখক বিভিন্ন সময় লিখেছিলেন। রমেশ চন্দ্র দত্ত স্টিমারে করে ৩ মার্চ ১৮৬৮ তে লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা দেন, সঙ্গী ছিলেন সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি ও বিহারীলাল গুপ্ত (দুজনেই সিভিল সার্ভিসের সদস্য ও রাজনীতিবিদ)। জলপথে কলকাতা থেকে গঙ্গা নদী হয়ে ডায়মন্ড হারবার গিয়ে মুলতান নামক স্টিমারে তাঁরা রওনা দিলেন। গঙ্গাসাগরে এসে স্টিমার নোঙর করল ও পরদিন সকালে সমুদ্রে প্রবেশ করল। গঙ্গার জল ও সমুদ্রের জল স্পষ্ট মিশে যেতে দেখা গেল। চতুর্দিকে শুধু নিবিড় নীল জল আর নীল আকাশ ছাড়া কিছু দেখা যায় না। চন্দ্রালোকিত রাতে সাদা ফেনাময় তরঙ্গ আর নক্ষত্র মালার মতো সমুদ্রকীট (বিভিন্ন সমুদ্রে কিছু জীবাণু, শৈবাল, সামুদ্রিক প্রাণী প্রভৃতির শরীর থেকে রাসায়নিক পদ্ধতিতে আলো নির্গত হতে দেখা যায়) যখন সেই ফেনার উপর দেখা দেয়, তার রূপ বর্ণনাতীত।
চার দিন পরে জাহাজ মাদ্রাজ শহরে উপস্থিত হল। লেখক মাদ্রাজের দুর্গ, পিপিলস্ পার্ক ও চিড়িয়াখানা দর্শন করলেন। জাহাজ মাদ্রাজ ছাড়ার তিন দিন পর শ্রীলংকার উপকূল দেখা গেল। শ্রীলংকার পর্বত দূর থেকে মেঘের মতো লাগছিল। লেখক সেই প্রথম পর্বত দেখলেন।
পরের দিন সকালে জাহাজ থেকে একটি ছোট নৌকায় উঠে তাঁরা সিংহলে অবতরণ করলেন। নারকেল, বাঁশ প্রভৃতি বৃক্ষের ছায়ায় সাধারণ কিন্তু পরিচ্ছন্ন কুটির শোভা পাচ্ছে। লেখকের মনে হল বাল্মিকী যে এই দেশকে স্বর্ণলঙ্কা বলেছেন তা অত্যুক্তি নয়। তাঁরা ওয়াকওয়ালেতে (ওয়াকওয়েল্লা) গেলেন। এই স্থানের সৌন্দর্য অপরিসীম। বহুদূরে ধূসর পর্বত শ্রেণী দেখা যায়। সেখানে অ্যাডামস পিক দেখা যায়। উঁচু ও নীচু বৃক্ষশ্রেণী ঢেউ খেলিয়ে বিরাজ করছে। কাছে অনেক পরিষ্কার পথ, কৃষি ক্ষেত্র, খাল ও একটি ক্ষুদ্র একটি নদী রয়েছে। এ দেশের মানুষ বিদেশীদের কাছে বিক্রয়ের জন্য দারচিনি, হীরা, সোনা, আংটি প্রভৃতি নিয়ে এসেছে। তবে জিনিসপত্র কেনার সময় দরদাম না করলে ঠকতে হয়। তাঁরা একটি দারচিনি বাগানে ও একটি বৌদ্ধ মন্দির দর্শন করলেন। মন্দিরে গৌতম বুদ্ধের অষ্টাদশ হাত মূর্তি রয়েছে। লেখক জেনে অবাক হলেন যে মন্দিরের পুরোহিত রাম-রাবণের বিষয়ে কিছু জানেন না। মন্দিরের ছায়ায় বসে লেখক অতি সুমিষ্ট নারকেলের জল পান করলেন এবং রাতে হোটেলে ইলিশ মাছ সহ অনেক সুখাদ্য উপভোগ করলেন।
আরো দিন সাতেক চলার পরে আফ্রিকার উঁচু পর্বত শ্রেণী দৃশ্যমান হল। আরো দুইদিন পরে আফ্রিকার অ্যাডেন (ইয়েমেনে অবস্থিত) শহর দেখতে বেরোলেন লেখক ও সঙ্গীরা। নগর সৌন্দর্যবিহীন, অনুর্বর পাহাড়ে ঘেরা, গাছপালা প্রায় নেই। এখানকার কৃষ্ণকায় মানুষরা সূর্যের উত্তাপকে ভয় করে না। বালক বালিকারা লেখকের গাড়ির সঙ্গে আধঘন্টা পর্যন্ত এই রোদে দৌড়তে লাগলো। এরা সাঁতারেও পারদর্শী। লেখকদের স্টিমারের চারপাশে সাঁতার কেটে তারা ভিক্ষা চাইছিল। অ্যাডেন শহরের দুর্গ খুব সুরক্ষিত কারণ প্রস্তরময় স্থানে একটি অবস্থিত। এখানে জলাশয় দেখার মত। জল এখানে দুষ্প্রাপ্য বলে পর্বত দ্বারা ঘেরা স্থান বা প্রাচীর দ্বারা ঘেরা স্থানে বর্ষার জল এরা ধরে রাখে, সেই জল সারা বছর ব্যবহার করে।
পরদিন অ্যাডেন ছেড়ে বাব-এল-মানডেব প্রণালীতে পৌঁছলেন। একদিকে আরব দেশীয় পাহাড়, অন্যদিকে পেরিম (ইয়েমেনের দ্বীপ) নামক ক্ষুদ্র দ্বীপ। লোহিত সাগরের জলের তলায় অনেক ক্ষুদ্র পাহাড় আছে, তাই এই পথে সমুদ্রে জাহাজের চলাচল বিপদজনক। তারপর তাঁরা সুয়েজ উপসাগরে প্রবেশ করলেন। এখন দুই ধারে ভুমি, সমুদ্রের জল স্থির। সেই রাতে তাঁরা সুয়েজ পৌঁছলেন। বন্দরটি জাহাজ, স্টিমারের অজস্র আলোয় খুব সুন্দর লাগছিল। এবার তাঁরা মুলতান স্টিমার ত্যাগ করলেন।
এরপর মিশর দেশের রেলগাড়িতে তাঁরা আলেকজান্দ্রিয়ার দিকে চললেন। মিশরের রেলগাড়ির চলাচলে সময়ের ঠিক-ঠিকানা নেই। আলেকজান্দ্রিয়া পৌঁছে শহর দেখতে বেরোলেন লেখক ঘোড়ার গাড়ি করে। রাস্তাঘাট প্রশস্ত, ঘরবাড়ি বড় ও সুন্দর। একটি সুন্দর উদ্যানে পম্পির স্তম্ভ দেখলেন, ৬৫ হাত উঁচু। এই স্তম্ভের চারপাশে সুপ্রাচীন দেব-দেবীর মূর্তির ভগ্নাবশেষ রয়েছে। ৫০ হাত উঁচু ক্লিওপেট্রার স্তম্ভ দেখলেন।
এবার আলেকজান্দ্রিয়া থেকে স্টিমারে করে তাঁরা মালটা দ্বীপে পৌঁছলেন। এই স্থানের পরিষ্কার পাথরে বাঁধানো পথ, সুন্দর বাড়িঘর, সুসজ্জিত দোকান দেখলেন। এই প্রথম তিনি কোন ইউরোপীয় নগর দেখলেন। একটি উদ্যানে গেলেন, যা ফোয়ারা, সাইপ্রাস গাছ, কমলা লেবু গাছ দিয়ে সুসজ্জিত। এখানকার কমলালেবুর ভিতরটা রক্তবর্ণ এবং সেগুলি অতি সুস্বাদু। মালটার গভর্নরের প্রাসাদ, সেন্ট জন চার্চ, বীরপুরুষের সমাধিস্থান, কিছু প্রস্তর নির্মিত মূর্তি প্রভৃতি দেখে লেখকেরা আবার স্টিমারে ফিরে এলেন।
স্টিমার মালটা দ্বীপ পরিত্যাগ করে লণ্ডন অভিমুখে যাত্রা করল। চলার পথের দূর থেকে জিব্রাল্টার পাহাড় ও জেবেল-আলতারিক (আরবী ভাষায় আল তারিখ নামক বীরের শহর) নগর দেখা গেল। ছবির মত জেবেল আল তারিখ বা তারিখের পাহাড় (জিব্রাল্টার পাহাড়) ও দুর্গ দর্শন করে তাঁরা সন্ধ্যায় স্টিমারে ফিরে এলেন। পরদিন সেন্ট ভিন্সেন্ট অন্তরীপের কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় সেখানে অনেক বড় পাহাড় ও একটি বাতিঘর দেখলেন। রাতে ফিনিস্টেয়ার অন্তরীপ অতিক্রম করা হলো। পরদিন ফ্রান্সের ব্রেস্ট শহরের কাছে উসান্ট অন্তরীপ দেখা গেল। দুদিন পর আইল অফ ওয়াইট নামক সুন্দর দ্বীপের কাছ দিয়ে তাঁদের স্টিমার চলল। সেখানে ভারতের মতো সুন্দর সবুজ বন, উদ্যান, শস্য ক্ষেত্র চোখে পড়ল।
সেদিন সন্ধ্যায় (১১ ই এপ্রিল, ১৯৬৮) সাউদাম্পটন হয়ে তাঁরা লন্ডনে পৌঁছলেন। লন্ডন এক বিশাল শহর সেখানে প্রায় চল্লিশ লক্ষ মানুষ বাস করে। বাড়িগুলি চার-পাঁচ তলা। নীচের তলাটি প্রায়শ মাটির নীচে অবস্থিত। বাড়ির বাইরের দেওয়াল ইঁটের আর ভিতরের দেওয়াল কাঠের উপরে কাগজে মোড়া। এখানে খুব বড় বড় উদ্যান আছে, সেখানে সবাই প্রবেশ করতে পারে। এগুলি আছে বলেই লন্ডন শহরের পরিবেশ স্বাস্থ্যকর আছে। বাড়িগুলি শ্রেণীবদ্ধ ও খুব কাছাকাছি অবস্থিত। ঘর গুলি ছোট ছোট কারণ বাড়িগুলি শীতকালের উপযোগী করে তৈরি। গ্রীষ্মকাল স্বল্প স্থায়ী ও অস্বাস্থ্যকর। আকাশ এই সময় মেঘে ঢাকা থাকে। সব সময় বৃষ্টি হয়। কুয়াশায় চারদিক ভোরে থাকে, সূর্য প্রায় দেখাই যায় না।
লেখক লন্ডনের নিকটে সিডেনহ্যামের ক্রিস্টাল প্যালেস দেখতে গেলেন। বিশাল কাচের তৈরি অট্টালিকা, সূর্যালোকে ঝকমক করতে থাকে। বাইরের অংশে সুন্দর উদ্যান, ফোয়ারা, লেক, মূর্তি প্রভৃতি দিয়ে সাজানো। ভিতরের চিত্রশালার ছবিগুলি বিক্রয়ের জন্য রাখা আছে।
রমেশ চন্দ্র দত্ত সেন্ট জেমস হলে বিশিষ্ট লেখক চার্লস ডিকেন্সের নিজের লেখার পাঠ শুনতে গেলেন। তাঁর পাঠের পদ্ধতি এতই চমৎকার যে সবাই মুগ্ধ হল।
নভেম্বরে লন্ডনের পথঘাট, বাড়িঘর, উদ্যান, গাছপালা সব বরফে ঢেকে গেল। মনে হল সব যেন রুপো দিয়ে মুড়ে দেওয়া হয়েছে। শীতকালে লন্ডনে সূর্য দেখতে পাওয়া যায় না বললেই চলে। মাঝে মাঝে বরফ পড়ে, পরিবেশ খুব শীতল ও আর্দ্র থাকে।
সেই মাসেই লন্ডনের লেখক ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দের ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নির্বাচন দেখলেন। তিনি দেখে চমৎকৃত হলেন যে ইংল্যান্ডের রাজতন্ত্রের মূল স্থানে নাগরিকরা এত স্বাধীনতা সুখ ভোগ করে, যা একমাত্র আমেরিকা ছাড়া কোন দেশ করে না।
এরপর ডিসেম্বরে এলো বড়দিন। সকালে উচ্চমাত্রায় ঘন্টার ধ্বনি শোনা ছাড়া রাস্তায় কোন উৎসবের চিহ্ন বা শব্দ পাওয়া যায় না। যা কিছু উৎসব এখানে যার যার বাড়ির মধ্যে হয়।
এক বছর ধরে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার জন্য পড়াশোনা করে লেখক পরীক্ষায় বসলেন ১৮৬৯ খ্রিষ্টাব্দে। লন্ডন ইউনিভার্সিটি কলেজ তিনি এই পরীক্ষার প্রস্তুতি জন্য পড়েছেন এবং ওই কলেজের অধ্যাপকদের কাছে ব্যক্তিগতভাবেও পড়েছেন। অধ্যাপকরা খুব দয়ালু ছিলেন এবং তাঁরা বন্ধুর মতো লেখকের সঙ্গে মিশেছেন। বিশেষ করে ইংরাজীর অধ্যাপক মিস্টার হেনরি মর্লে, সংস্কৃতের অধ্যাপক ডক্টর থিওডোর গোল্ডস্টুকারের কথা তিনি স্মরণ করেছেন। পরীক্ষায় তিনশোর বেশি ইংরাজ ছাত্র বসেছে, যার মধ্যে শুধু পঞ্চাশ জন মনোনীত হবে। পৃথিবীর অন্যতম কঠিনতম পরীক্ষাটি এক মাসের বেশি সময় ধরে চলল। লেখকের বিষয় ছিল ইংরেজি, অংক, দর্শন ও সংস্কৃত। প্রতিটি বিষয়ে মৌখিক পরীক্ষাও দিতে হলো। এক মাস অত্যন্ত উৎকণ্ঠা সঙ্গে অপেক্ষা করার পর ফল প্রকাশ হলে দেখা গেল লেখক শুধু পাসই করেননি, তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন। তাঁর সঙ্গীরাও উত্তীর্ণ হয়েছেন এই পরীক্ষায়।
এরপর লেখক সঙ্গীদের সঙ্গে কিছুদিনের জন্য সমুদ্রে বেড়াতে গেলেন। ইস্টবোর্ন নামক সমুদ্র শহরে সমুদ্রের শোভা উপভোগ করে লেখক পেভেন্সি ক্যাসেল দেখতে গেলেন। দুর্গটি এখন ভগ্নপ্রায়। সমুদ্রপথে আসা-যাওয়া করার সময় ফিরতি পথে তাঁরা মার্টিলো টাওয়ার দেখলেন, যেটি ইংরেজরা নেপোলিয়নের আক্রমণের ভয়ে ১৮০৪-এ তৈরি করেছিল। কেন্ট ও সাসেক্স উপকূল বরাবর এরকম দুর্গ বেশ কিছু আছে। লেখক হার্স্টমন্সকো দুর্গ নামক মধ্যযুগীয় ইংরাজ দুর্গ দেখতে গেছিলেন। তারপর সেন্ট লিওনার্ড ও হেস্টিংস শহর দেখলেন সমুদ্র তীরে। সেন্ট লিওনার্ডের 'লাভার্স সিট' একটি রোমান্টিক জায়গা, যেখানে একটি মেয়ে তার প্রেমিকের মৃত্যুতে শোকে আচ্ছন্ন হয়ে সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়ে মৃত্যুবরণ করেছিল বলে শোনা যায়। ফেয়ারলাইট গ্লেন আরেকটি মায়াময় স্থান যা একটি লম্বা ছায়াচ্ছন্ন পথ। হেস্টিংস দুর্গ একটি ত্রিকোণ ছোট পাহাড়ের উপর সমুদ্রের ধারে অবস্থিত দুর্গ। লন্ডনে ফেরার পথে উইলিয়াম, দ্য কংকারারের তৈরি অ্যাবে দেখলেন তাঁরা।
পরবর্তী দ্রষ্টব্য স্থান মাদাম তুসোর মিউজিয়াম, যেখানে একেবারে জীবন্ত রূপের মোমের মূর্তি রাখা আছে। অনেকবার লেখক মূর্তিকে সত্যি মানুষ ভেবে ভুল করলেন। যন্ত্রের সাহায্যে মূর্তিগুলোর মাথা, অঙ্গ নাড়ানো যায়। 'চেম্বার অফ হররে' বীভৎস খুনি ও অপরাধীদের মূর্তি দেখে শিহরিত হলেন।
এরপর একদিন লেখক গেলেন ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবেতে। সেখানে ইংল্যান্ডের সম্রাট, যোদ্ধা, রাজনীতিবিদ, কবি, লেখকদের সমাধিস্থল ও প্রস্তর নির্মিত প্রতিমূর্তি দেখে আনন্দিত হলেন। যাঁরা ইংল্যান্ডের ইতিহাস, কাব্য, সাহিত্য পড়েছেন তাঁরা এই স্থান দেখে মুগ্ধ হবে।
এরপর একদিন লেখক ও তাঁর সঙ্গীরা লন্ডন থেকে ট্রেনে রিচমন্ড এসে টেমস নদীতে নৌকায় আলেকজান্ডার পোপের (ইংরেজ কবি) টুইকেনহ্যাম দেখে টেডিংটন পর্যন্ত গেলেন। এই স্থানে টেমস নদী অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর। দুপাশের গাছে বসন্তের প্রভাবে পরম রমণীয় রূপ।
ইংল্যান্ডে বসন্ত খুব সুন্দর আবহাওয়া, সূর্যালোকিত দিন, গাছে নতুন পাতা, ফুল, ও পাখির ডাকে ভরা। ভারতের থেকে ইংল্যান্ডে শীতের পরে বসন্তের আগমন অনেক বেশি নজর কাড়ে কারণ ভারতের শীত অনেক বেশি আকর্ষণীয়। টেমস নদীর দুধারে সবুজ ঘাস জমি, চেস্টনাট গাছ, সুন্দর ঝোপঝাড় সহ অপূর্ব রূপ নিয়েছে। টেডিংটন থেকে এক সুন্দর রাস্তায় পায়ে হেঁটে ঘন্টাখানেকে এল হাম্পটন কোর্ট (রাজা অষ্টম হেনরির প্রাসাদ)। তাঁরা প্রাসাদের রাজকীয় কক্ষগুলি, সভাঘর দেখলেন, অনেক সুন্দর পেইন্টিং দেখলেন প্রতিটি ঘরে। লন্ডনে টেম্পল বার, যা এখন কেশচর্চার স্থান, একসময় সেটিও রাজা অষ্টম হেনরির প্রাসাদ ছিল।
(চলছে)