সেকালের বাঙালিদের ভ্রমণ ধারাবাহিক
------- সুমনা দাম
(আগের পর্বের পরে)
দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ঝাঁপানে (একটি কেদারা যা চারজন লোক বহন করে) করে ঘুরে ঘুরে হিমালয় পর্বতে উঠতে লাগলেন। কখনো একটানা উপরে উঠে, কখনো কিছুটা নেমে নদীর ধার পর্যন্ত গিয়ে, তারপর আবার উঠে চলতে থাকে ঝাঁপান। নদীর ধারে রান্না, খাওয়া হল। তারপর আবার সামনের পাহাড়ে চড়া। রাতে হরিপুরে রাত্রি যাপন। এভাবে চলতে চলতে তাঁরা সিমলার বাজারে উপস্থিত হলেন। দোকানদারেরা তাঁকে অবাক হয়ে দেখতে লাগলো। সেই বাজারেই বাসা ঠিক করে তাঁরা থাকলেন এক বছর। ১৮৫৭ -র এপ্রিল থেকে ১৮৫৮ - র এপ্রিল পর্যন্ত।
সেখানে যেসব বাঙালি কর্মসূত্রে থাকে তারা এসে লেখকের সঙ্গে দেখা করে। তাদের কাছে শুনে তিনি একটি সুন্দর জলপ্রপাত দেখতে গেলেন। ঝাঁপানে করে খাদের মধ্যে নেমে দেখলেন সেখানে লোকের বসতি, শস্য ক্ষেত রয়েছে, গরু-মোষ চড়ছে। দেখে তিনি আশ্চর্য হয়ে গেলেন। আরও নীচে গিয়ে আর ঝাঁপানে যাওয়ার পথ নেই। পায়ে হেঁটে নীচে গিয়ে লাঠি ধরে ধীরে ধীরে জলপ্রপাতের নিকটে উপস্থিত হলেন। তিনশ হাত উঁচু থেকে জলধারা পড়ছে। পাথরের ওপর প্রতিঘাতে ফেনা তৈরি হচ্ছে। তিনি বসে জলক্রিড়া দেখতে লাগলেন। পরের রবিবার আবার তিনি সঙ্গীদের নিয়ে জলপ্রপাতে গিয়ে বনভোজন করলেন। জলপ্রপাতের জলে স্নান করে খুব আনন্দ পেলেন তিনি।
একদিন লেখক খবর পেলেন গুর্খা সৈন্যরা সিমলা লুঠ করতে আসছে। সিমলাতে খবর এল সিপাহীদের বিদ্রোহে দিল্লি ও মিরাটে গুরুতর হত্যাকাণ্ড হয়েছে। সিমলায় সাহেবরা গুর্খা সৈন্যদের নিরস্ত্র হতে হুকুম দিতে তারা রেগে একজোট হল ও হুকুম মানল না। এরপর আরো গুর্খা সৈন্য সিমলা আক্রমণ করতে এল। সিমলার বাঙালিরা ভীত হয়ে পালাতে লাগলো। সাহেবরাও পালিয়ে গেলে, সিমলা প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ায় দেবেন্দ্রনাথ দেখলেন এবার সিমলা ছাড়তে হবে। কিন্তু কুলি না পাওয়া গেলে কি করে সম্ভব স্থান পরিবর্তন। এমন সময় এক দীর্ঘকায় রক্তচক্ষু কৃষ্ণ-বর্ণের পুরুষ এসে আশ্বাস দিল যে সে কুলি সংগ্রহ করে দেবে। লেখক অত্যন্ত সংশয়গ্রস্ত হয়ে রাজি হলেন। পরের রাতে সেই ব্যক্তি কুলি নিয়ে এল এবং লেখক তাদের সঙ্গে চললেন। প্রতিমুহূর্তে ভয় হতে থাকল যে এরা তাঁদের মেরে, খাদে ফেলে দিয়ে, সব টাকা লুঠ করে পালাবে। কিন্তু লেখক ক্রমে দেখলেন এরা খুব বিশ্বাসী। এমনকি তাঁর পকেটের কিছু টাকা ছড়িয়ে পড়েছিল, কুলিরা সেসব কুড়িয়ে এনে তাঁকে দিল। কুলিরা তাঁদের ডগসাহীতে (দাগশাই) পৌঁছে দিল। সেখানে এক গোয়ালার বাড়িতে ভাঙ্গা ঘরে দড়ির খাটিয়ায় লেখক রাত্রিযাপন করলেন। পরদিন দেখলেন এক পাহাড়ের চূড়ায় সাহেব সৈন্যরা মদের খালি বাক্স বসিয়ে এক চক্রাকৃতি কেল্লা তৈরি করে তার মধ্যে পতাকা উড়িয়েছে। তারা ভয়ে ভয়ে লেখকের কাছে জানতে চাইল গুর্খারা এখানে আসছে কিনা। লেখক সেই গোয়ালার ভাঙ্গা ঘরে আরো কিছুদিন কাটালেন। তারপর শিমলা নির্বিঘ্ন হয়েছে শুনে সেখানে যাওয়ার উদ্যোগ করলেন। কুলি পাওয়া গেল না, একটি ঘোড়া পাওয়া গেল মাত্র। জৈষ্ঠ্যমাসের উত্তাপে তৃষ্ণার্ত হয়ে বহু পথ পার হয়ে মধ্যাহ্নে একটি বাংলো পেলেন এবং দৈবক্রমে সামান্য জল ও খাবার ও পেলেন। সন্ধ্যের সময় সিমলা ফিরে এলেন।
সিমলা ফেরার কিছুদিন পরে দেবেন্দ্রনাথ একটি ঝাঁপানে করে সঙ্গীদের ছাড়া একাকী আরও উত্তরের পর্বতের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। পথে ভাঙা সেতুর কার্নিশের উপর দিয়ে হেঁটে পার হতে হল, যার নীচে ভয়ানক গভীর খাদ। পর্বত একেবারে প্রাচীরের মতো খরা উপরে উঠেছে, নীচে বিষম খাদ। তার ওপর নিকটস্থ গ্রাম থেকে বাঘের মতো কুকুর তাড়া করে এল। এই সংকটময় পথ পেরিয়ে একটি শূন্য পান্থশালা পেয়ে সেখানে থাকা হলো। সঙ্গে রান্না করার কোনো লোক নেই, তাই তিনি ঝাঁপানিদের মকাই-যব মেশানো রুটি খেলেন। কতগুলি পাহাড়ি এসে নাচ গান করছিল। তার মধ্যে একজনের দেখলেন নাক নেই। শুনলেন ভালুক থাবা মেরে নাক উঠিয়ে নিয়ে গেছে। কিন্তু তাও সে আনন্দ করছে, নাচছে। পাহাড়িদের সারল্য দেখে লেখক খুব প্রীত হলেন। পরদিন রাতে আরেকটি পাহাড় চূড়ায় থাকলেন তাঁরা। গ্রামবাসীরা বলল এখানে তাদের অনেক কষ্ট করতে হয়। শীতকালে বরফ, ক্ষেতের সময় ভালুক শুয়োরের অত্যাচার প্রভৃতি। লেখক জানলেন এখানে স্ত্রীলোকের সংখ্যা কম বলে পাণ্ডবদের মতো তারা সব ভাই মিলে একজন স্ত্রীকে বিবাহ করে। সেই স্ত্রীর সন্তানরা তাদের সবাইকে বাবা বলে। পরদিন চড়াই পথে ঝাঁপানে যাওয়া গেল না। দেবেন্দ্রনাথকে সেই দুর্গম পথ পদব্রজে যেতে হল। শিখরে উঠে একটি ঘর থাকার জন্য পাওয়া গেল। পরদিন আরো উপরে উঠে নারকান্ডাতে পৌঁছানো গেল। এখানকার উচ্চতা ও শীত আরো বেশি। পরদিনও পায়ে হেঁটে চললেন লেখক। ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে পথ। যেতে যেতে দেখলেন অনেক বৃক্ষ দাবানলে পুড়ে গেছে। কোন গাছে ফুল ফল নেই। শুধু কেলু (পাইন) নামক বৃক্ষের কদাকার ফল দেখা যায় যা পশু পাখিও খায় না। কিন্তু পাহাড়ের গায়ের তৃণলতাতে নানা রঙের ফুল ফল ধরে আছে। এই ফুলে গন্ধ নেই কিন্তু একরকম সাদা গোলাপ ফুটেছে তার গন্ধে চারিদিক আমোদিত। মাঝে মাঝে লাল রংয়ের স্ট্রবেরিও দেখা যায়। এই নির্জন প্রদেশের সুন্দর পুষ্পলতা দেখে তাঁর মনে ঈশ্বরের করুণার কথা পুনরায় প্রতিয়মান হল। জোরে জোরে হাফেজের কবিতা পড়তে পড়তে সন্ধ্যেবেলা তিনি সুংরি পাহাড়ের চূড়ায় পৌছলেন। সামনের পর্বতের কোনোটি নিবিড় বনের ঢাকা - ভাল্লুক প্রভৃতি হিংস্র জন্তুর বাসস্থান, কোন পর্বত গমের খেতে ঢাকা - সোনার বরন, কোন পর্বতের গা আগাগোড়া তৃণ-আবৃত, আবার কোন কোনটি তৃণশূন্য। সূর্য অস্ত গেলে লেখক একা শৃঙ্গে বসে রইলেন। দূর থেকে পর্বতের স্থানে স্থানে কেবল প্রদীপের আলো মানুষের বসতির পরিচয় দিতে থাকল। পরদিন কেলুবনের ভিতর দিয়ে অবতরণ শুরু হল। তাঁর মনে হল পর্বতের নীচ থেকে উপর পর্যন্ত বৃক্ষরা যেন সৈন্যের মতো দাঁড়িয়ে আছে। এটি ঈশ্বরের এক আশ্চর্য মহিমা। পথে একটি প্রস্রবণে হিমশীতল জলে স্নান করে উপাসনা করলেন দেবেন্দ্রনাথ। তারপর ছাগলের দুধ এনে দিল ঝাঁপানিরা। দেবেন্দ্রনাথের অভ্যাস ছিল উপাসনার পর দুগ্ধ পানের। কিন্তু এরকম দুর্গম অঞ্চলে দুগ্ধ পাওয়া বিস্ময়কর। তিনি ঈশ্বরের করুণায় ধন্য হলেন। পাহাড়ি পথে নীচে নামতে নামতে বোয়ালি (বাওলি, উত্তর প্রদেশ) নামক স্থানে এলেন তাঁরা। এই পাহাড়ের নীচে নগরী নদী (?) বয়ে গেছে। এখান থেকে দূরে শতদ্রু নদী দেখা যায়। শতদ্রু নদী তীরে রামপুর (রামপুর, উত্তর প্রদেশ) অবস্থিত। তারপর ভজ্জীর (ইংরেজ শাসনকালের একটি নামমাত্র সার্বভৌম রাজ্য, যেটি বর্তমানের হিমাচল প্রদেশে অবস্থিত ছিল) রাণার রাজধানী সোহিনী (সুনী, হিমাচল প্রদেশ) হয়ে শতদ্রু নদী নীচে বিলাসপুরে (বিলাসপুর, উত্তর প্রদেশ) গিয়ে পর্বত ত্যাগ করে পাঞ্জাবে সমতলে প্রবাহিত হয়েছে। পরদিন পর্বতে অবতরণ করে নগরী নদীতীরে উপস্থিত হলেন তাঁরা। এই নদী বিশাল বিশাল পাথরের খন্ডে আঘাত পেয়ে গম্ভীর শব্দের ক্রুদ্ধ ভাবে বয়ে চলেছে নীচের দিকে। নদীর উপরে সেতু পেরিয়ে একটি সুন্দর বাংলোয় তাঁরা আশ্রয় নিলেন। উপত্যকাটিতে একটি মাত্র পরিবার বসবাস করছে। তাদের আনন্দ ও সন্তোষ থেকে লেখকের মনে হল কোন রাজাও এত সুখী নন। সেদিন সন্ধ্যায় নদীতীরে ভ্রমণকালে তিনি পাহাড়ে দাবানল দেখলেন। পরদিন নদীর হিমশীতল জল ঘটি করে তুলে স্নান করলেন। এরপর পাহাড়ে আরোহন করে দারুণঘাট (দারানঘাটি, হিমাচল প্রদেশ) নামক স্থানে পৌঁছে দেখলেন সামনে এক ভীষণ উঁচু তুষারাবৃত শৃঙ্গ। আষাঢ় মাসের প্রথম দিনে লেখক এখানে তুষারপাত দেখলেন। এই পর্বত থেকে অবরোহন করে সিরাহন (সারাহান, হিমাচল প্রদেশ) নামক পর্বতে উপস্থিত হলেন দেবেন্দ্রনাথ। এখানে রামপুরের রাণার অট্টালিকা আছে। এরপর আরো দিন দশেক যাত্রা করে সিমলার বাসায় পৌঁছলেন। এই কুড়ি দিনের পর্বত ভ্রমণ পর্বে ঈশ্বর তাঁকে ধৈর্য, সহিষ্ণুতা প্রভৃতি শিক্ষা দিয়ে ধন্য করেছেন বলে, তাঁর প্রতি শ্রদ্ধায় অবনত হলেন লেখক।
এবার হিমালয়ে বর্ষা ঋতু এল। মাথার উপরে নয়, পাহাড়ের নীচে মেঘ দেখে লেখক আশ্চর্য হলেন। মাঝে মাঝে এক পক্ষ কাল বৃষ্টি চলল, সূর্যের দেখা মিলল না। ঝরনার বর্ষার জলে পরিপুষ্ট হয়ে উঠল আর পথ হয়ে উঠল দুর্গমতর। আশ্বিনে শরৎকালের কোন বিশিষ্ট রূপ নেই হিমালয়ে। শীতে পর্বত তলা থেকে শিখর পর্যন্ত বরফে আবৃত হয়ে শুভ্র রূপ ধারণ করল। ভোরে বেড়ানোর অভ্যাস কিন্তু প্রবল শীতেও দেবেন্দ্রনাথ অব্যাহত রাখলেন। প্রতিদিন সকালে বহুদূর ভ্রমণ করে এসে চা ও দুধ খেতেন। বেলায় স্নানের সময় বরফ মেশানো জল মাথায় ঢালতেন। মুহূর্তের জন্য যেন রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যেত, কিন্তু পরক্ষণে তা দ্বিগুণ বেগে চলে শরীরে স্ফূর্তি আর তেজ সঞ্চার করত। শীতের রাতেও তিনি ঘরে আগুন জ্বালাতেন না। শীত সহ্য করে সহিষ্ণুতা বৃদ্ধির প্রয়াস করতেন। রাতে শয়নকক্ষের দরজা খুলে রাখতেন। শীতের রাতে ঠান্ডা বাতাস তাঁর খুব ভালো লাগত। দিনরাত তিনি আধ্যাত্মিক চিন্তায় ব্যাপৃত থাকতেন।
মাঘ মাসের শেষে (ফেব্রুয়ারি ১৮৫৮) ভজ্জীর রাণার মন্ত্রী রাণাসাহেবের নিমন্ত্রণ নিয়ে এলেন। তিনি ঝাঁপানে নীচে উপত্যকায় নামতে থাকলেন। সন্ধ্যায় শতদ্রু নদীর তীরে রাণার রাজধানী সোহিনী নগরে পৌঁছলেন। সেখানে তিনি রাজগুরু ও রাণার সঙ্গে ধর্মালোচনা করলেন। শতদ্রু নদীর তীরে তিনি একাকী ভ্রমণ করলেন। চর্ম মশকে (এক রকম বড় চামড়ার থলে) চড়ে তিনি অপর পাড়েও গেছিলেন। শতদ্রু নদীতে বড় বড় পাথর থাকায় নৌকা চালানো যায় না। তীরে অনেকে স্নান করছিল। তারা বিশ্বাস করে এখানে স্নান করলে নানা রোগের উপশম হয়। সপ্তাহখানেক এখানে থেকে তিনি সিমলা ফিরে গেলেন। পথে বনের মধ্যে রত্নকুণ্ডল, হীরার কণ্ঠী, মুক্তার মালা ও দিব্য বস্ত্র পরিধান করে রাজকুমারকে মৃগয়া করতে দেখলেন। তাকে দেখে মনে হল যেন বনদেবতা।
চৈত্র মাসের শেষে চারদিক পাহাড় ফুলে ফুলে ভরে উঠল। এক বছর সিমলা বাজারের বাসায় কাটিয়ে এবার তিনি পর্বতের উপর একটি সুন্দর, নির্জন স্থানে বাংলো নিলেন। সেই চূড়ায় একটিমাত্র বৃক্ষ ছিল, যা তাঁর নির্জনের বন্ধু হল। বৈশাখ মাসে তিনি পশমের পোশাকে ঘুরছেন এই রহস্য স্বদেশী বাঙালি কি করে বুঝবে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। নির্জন পাহাড়ে পাথরে তিনি ধ্যানমগ্ন থাকতেন। কখনো যতদূর মন চাইত নির্জন বনময় পথে তত দূর পায়ে হেঁটে চলতেন। এরপর আবার বর্ষা এল। বর্ষার জলে প্রবল বেগে নিম্ন মুখে ছুটে চলা নদীকে দেখে তাঁর উপলব্ধি হল যে নদীর সাধ্য নেই নিজের জন্য এই পূণ্যভূমিতে স্থির হয়ে থাকার। তাকে সর্বশক্তিমানের শাসনে নিম্নের ভূমিকে শস্যশালিনী করার জন্য উদ্ধত ভাব পরিত্যাগ করে, কর্দমাক্ত হলেও, নিম্নগামিনী হতেই হবে। তেমনই তাঁর হৃদয় অন্তর্যামীর আদেশ পেলেন যে, তিনি এখানে অবস্থান করে যে শিক্ষা লাভ করেছেন তা পৃথিবীতে গিয়ে প্রচার করতে হবে। এই উপলব্ধির পর তিনি বাড়ি ফিরতে উদ্যোগী হলেন।
১৬ অক্টোবর, ১৮৫৮ বিজয়া দশমীর দিন তিনি প্রায় দুই বছর পর সিমলা ছেড়ে ঝাঁপানে করে অবরোহন শুরু করলেন। ক্রমে কালকা, পঞ্জৌর (পনজৌর, পাঞ্জাব) হয়ে অম্বালা এলেন। এখান থেকে ডাকের গাড়ি ভাড়া করে রাত দিন চলতে থাকলেন। গাড়ি থেকে দেখলেন ঘোড়সওয়ার গাড়ির পাশে পাশে ছুটে চলেছে। বিদ্রোহীদের ভয়ে গভর্নমেন্ট পথিকদের নিরাপত্তার জন্য রাতে ঘোড়সওয়ার ছোটানোর নিয়ম করেছে। কানপুরের নিকট একস্থানে তিনি দেখলেন একটি মাঠে অনেক ভিড়, অনেক তাঁবু পড়েছে। সেখানে খোঁজ নিয়ে জানলেন দিল্লির বাদশাহকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে, তার জন্য এই ব্যবস্থা। সিমলা যাওয়ার পথে বাদশাহকে আনন্দে ঘুড়ি ওড়াতে দেখেছিলেন দেবেন্দ্রনাথ। আজ তিনি বন্দী হয়ে কারাগারে যাচ্ছেন। এই সংসারে কখন কার ভাগ্যে কি ঘটে বলা যায় না এ কথা ভাবলেন দেবেন্দ্রনাথ। কানপুর থেকে রেলপথ খুলেছে এখন। তিনি টিকিট কাটার চেষ্টা করে প্রথমে ব্যর্থ হলেন, কারণ শুধু আহত সৈন্যদের রেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পরে বাঙালি স্টেশনমাস্টার, যিনি তত্ত্ববোধিনী পাঠশালায় তাঁর ছাত্র ছিলেন, তিনি তাঁকে চিনতে পারায় টিকিটের ব্যবস্থা করে দিলেন। এলাহাবাদে তখনও স্টেশন তৈরি হয়নি। পথের মধ্যে এক স্থানে রেল থামল। তাঁরা নেমে হেঁটে তিন ক্রোশ দূরে এলাহাবাদের ডাকবাংলোতে গেলেন। ডাক বাংলো ঘর না থাকায় লালকুঠি নামক কেল্লার কাছের একটি স্থানে থাকা হল। এলাহাবাদে তিনি দেখলেন বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে যে কেউ যদি আরও পূর্বাঞ্চলে যেতে চায় সরকার তার জীবনের জন্য দায়ী থাকবে না। শুনলেন দানাপুরে কুমার সিংহের (কুনোয়ার সিং) লড়াই চলছে। তিনি ভাবলেন এত বিপদে না গিয়ে জলপথে যাওয়ার কথা। স্টীমারে আশ্রয় পাওয়াও তখন ব্রিগেডিয়ারের অনুমতি সাপেক্ষ। কারণ সৈনিক ও তাদের পরিবারদের জন্য স্টীমার সংরক্ষিত। দেবেন্দ্রনাথের পরিচয় পেয়ে ব্রিগেডিয়ার অনুমতি দিলেন। কিন্তু স্টীমারে ঘর না থাকায় সঙ্গের কার্গো বোটে কাপ্তানের কেবিনে তাঁর স্থান হল। পথে সেই কেবিনও তাঁকে ইংরাজ মহিলাদের থাকার জন্য ছেড়ে দিয়ে ডেকে কাটাতে হল। তারপর রামপুরে স্টীমার বদল করে ১৫ই নভেম্বর ১৮৫৮ -তে তিনি একচল্লিশ বছর বয়সে কলকাতা ফিরলেন।
দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভ্রমণ কাহিনী এখানেই শেষ হল কারণ তাঁর আত্মজীবনী অসমাপ্তভাবে এখানেই সমাপ্ত হয়েছে।
দেবেন্দ্র নাথ ঠাকুরের ভ্রমণ কাহিনীটি যতটুকু প্রকাশিত হয়েছিল ততটুকুই বেশ কাহিনী বহুল ।অনেক কিছুই জানলাম ভ্রমণ বৃত্তান্তের মাধ্যমে। সত্যিই নিজের অবস্থানের নিম্নে মেঘের সমারোহ দেখার অপূর্ব অনুভূতি আর পাহাড়ের গায়ে নানান ফল আর রঙ বেরঙের ফুলের সমারোহ
উত্তরমুছুনচোখের আর মনের তৃষ্ণা পুরণ করে ।
উৎকৃষ্ট পর্বটি পড়ে সত্যিই সমৃদ্ধ।
শিউলি
ঠিক বলেছেন।
উত্তরমুছুন