সেকালের বাঙালিদের ভ্রমণ ধারাবাহিক
------- সুমনা দাম
জয়পুর শহরের রাস্তা চৌপাড়বন্দী অর্থাৎ পাশার ছকের আকারে চারিদিকে সমান চওড়া রাস্তা। রাস্তার দুই ধারে সুন্দর সুন্দর শ্বেত পাথরের বাড়ি, তাতে নানা প্রকার দেব মূর্তি ও অন্যান্য মূর্তি খোদিত আছে। ওই বাড়িগুলি ধনী শেঠেদের বাসস্থান। বাড়ীর নিচের তলায় দোকান। এক একটি পট্টিতে শুধু এক এক শ্রেণীর দোকান থাকে। চুড়ি পট্টিতে প্রায় ২৫০ চুড়ির দোকান, জুতা পট্টিতে ৫০০ জুতার দোকান। এরকমভাবে কম্বল আসন, উলের বস্ত্র, অন্য দ্রব্য, হালওয়ার দোকান, মেওয়ার দোকান। পশমিনা, হীরা, পান্না, মোতির দোকান বা গদি দোতলার উপর। শহর চারপাশে পাথরের চার স্তরের প্রাচীর বেষ্টিত প্রথম দ্বিতীয় তৃতীয় হয়ে চতুর্থ দ্বারে প্রবিষ্ট হয়ে রাজবাড়ীর কাছে যাওয়া যায়। সেখানে গোবিন্দজির মন্দিরও আছে, যা রক্ষা করছে পদাতিক সেনারা। গোবিন্দজির গোস্বামীকে খবর দিলে এক ছড়িবরদার একটি পাঁচ রঙের ঝড়ি হাতে করে এসে আগে আগে চলল, তাই কোন দ্বারে রক্ষীরা লেখকদের আটকালো না। শ্বেত পাথরে নির্মিত গোবিন্দজির মূর্তি রত্ন সিংহাসনে বিরাজিত ও রাজ পরিচ্ছদে সুসজ্জিত। মন্দিরে দিনে সাতবার ভোগ ও আরতি হয়। লেখকেরা দেব দর্শন ও আরতি দর্শন করলেন। গোবিন্দজির বাম ভাগে শ্রীমতিজির মূর্তি ও ডান ভাগে রাজকন্যার (রাজা সবাই জয় সিংহের কন্যা) পানের বাটা হাতে নিয়ে মূর্তি বিরাজিত আছে।
লেখক এখানে কয়েকটি কাহিনী বলেছেন - দিল্লির বাদশা আকবর বৃন্দাবনের গোবিন্দ, গোপীনাথ ও মদনমোহন মন্দির ভাঙ্গার আদেশ দেন (খুব সম্ভবত এই বাদশা আকবর না হয়ে আওরঙ্গজেব হবেন)। এই সংবাদ শুনেই জয়পুরের মহারাজ সওয়ায় জয়সিংহ বৃন্দাবনে গোস্বামীদের যত দেবমূর্তি ছিল সব জয়পুরে রাজধানীতে নিয়ে যান ও মন্দির স্থাপিত করেন। রাজকন্যা সর্বদা গোবিন্দজির মন্দিরে যেতেন যা অন্দরমহলের কাছে অবস্থিত ছিল। রাজকন্যার বিবাহকাল উপস্থিত হলে কন্যা বিবাহে অসম্মত হন এবং গোবিন্দজির শ্রীঅঙ্গে লিপ্ত হয়ে যান। এই কারণে তাঁর মূর্তি গোবিন্দজির ডানপাশে বিদ্যমান। জয়পুরে বৃন্দাবন ধামের সমস্ত দেবমূর্তি রয়ে গেছেন, কেবল মদনমোহনজির মূর্তি কড়োরির রাজা নিয়ে গেছেন ও সেই মূর্তি সেখানে আছেন। বৃন্দাবনে এইসব মন্দিরে প্রতিমূর্তি রয়েছে মাত্র। জয়পুরের রাজা গোবিন্দজির দেওয়ান হিসেবে রাজাকার্য পরিচালনা করেন। রাজ সিংহাসনে তিনি বসেন না। শহর থেকে ছয় ক্রোশ দূরে পাহাড়ের ওপর শিলাদেবীর মন্দির। এই দেবী পূর্বে মথুরাতে কংস রাজার রঙ্গস্থলে শিলারূপে ছিলেন। ওই শিলাতে কংস দেবকীর সন্তানদের আঁছড়ে বিনষ্ট করত। পূর্বে জয়পুরের এই মন্দির নরবলি হত। রাজা সওয়ায় জয়সিংহ নরবলি রদ করেছেন বলে নাকি দেবী রুষ্ঠ হয়ে বাম দিকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছেন।
সবাই রাজবাড়ী, গোপীনাথজির মন্দির ও অন্যান্য মন্দির দর্শন করলেন। কিছুদিন জয়পুরে বসবাস করে তারপর পুষ্করের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন।
(চলছে)
এই পর্বে রোজনামচার সময়কাল ৭ আষাঢ় ১২৬১ (২১ জুন ১৮৫৪) থেকে ২৩ আষাঢ় ১২৬১ (৭ জুলাই ১৮৫৪)
প্রিয় পাঠক: আপনার মতামত আমার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ! অনুগ্রহ করে একটি মন্তব্য করুন এবং এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার চিন্তাভাবনা শেয়ার করুন। আমি আপনার প্রতিক্রিয়া জানার জন্য আগ্রহী!

রাজস্থানের বিভিন্ন স্থানের সঙ্গে জড়িত কতো কাহিনীর জানকারী লেখিকার বৃত্তান্ত পড়ে অবগত হলাম। যত পড়ছি ততোধিক আগ্রহ বাড়ছে এই ভ্রমণ বৃত্তান্তের প্রতি। শিউলি
উত্তরমুছুনএই বৃত্তান্তের বেশ কিছু জায়গার দর্শন আমি করেছি তবে তখন ঐ স্থান গুলোর সাথে সম্পর্কিত এই কাহিনী গুলো আমার জানা ছিল না ।যদি তখন এগুলোর বিষয়ে জানা থাকতো তাহলে আরো উপভোগ করতাম ।শিউলি
উত্তরমুছুনএকদম ঠিক কথা বলেছেন!
উত্তরমুছুনঅনেক ধন্যবাদ 🙏
উত্তরমুছুন